R G Kar Hospital Incident

পিজিটি কী ভাবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ!

তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের পর থেকেই বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন প্রশ্ন তুলেছিল, ঘটনাস্থলে অভীক-সহ ওই বিশেষ গোষ্ঠীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তড়িঘড়ি কেন গিয়েছিলেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৫
Share:

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

সেমিনার রুমে কে তিনি? আর জি কর কাণ্ডে এ বার ‘লাল শার্ট’ রহস্য!

Advertisement

শুক্রবার কলকাতা পুলিশ দাবি করেছিল, তিনি ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ। যদিও সেই দাবি খণ্ডন করেছে সর্বভারতীয় চিকিৎসক সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য শাখাই। সমাজমাধ্যমে তারা দাবি করেছে, আর জি করের সেমিনার রুমে ভিড়ের মধ্যে লাল শার্ট পরা যুবক অভীক দে— যিনি রাজ্যের ‘স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ন্ত্রক’ বলে পরিচিত ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র
বিশেষ সদস্য।

তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধারের পর থেকেই বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন প্রশ্ন তুলেছিল, ঘটনাস্থলে অভীক-সহ ওই বিশেষ গোষ্ঠীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তড়িঘড়ি কেন গিয়েছিলেন? আর জি করের পালমোনারি মেডিসিন বিভাগের সেমিনার রুমে পোডিয়ামে পড়ে ছিল তরুণীর দেহ। এবং তা সাদা পর্দা দিয়ে ঘেরা ছিল। ওই ঘেরাটোপের মধ্যে অনেক লোকজন ভিড় করে রয়েছেন বলে কিছু ছবি শুক্রবার প্রকাশ্যে আসে। প্রশ্ন ওঠে, তাঁরা কারা? কেন তাঁরা মৃতদেহের সামনে ভিড় করে রয়েছেন? লালবাজারের তরফে ওই দিন সন্ধ্যায় ছবির লোকজনকে চিহ্নিত করে পরিচয় জানানো হয়। সেখানেই দাবি করা হয়, লাল শার্ট পরে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ। কিন্তু ওই দাবি মানতে নারাজ ডাক্তারদের একাংশ।

Advertisement

শনিবার ‘আইএমএ’-র রাজ্য শাখা সমাজমাধ্যমে পুলিশের চিহ্নিত করে দেওয়া ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন তুলেছে, অভীক দে কবে থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ হলেন? লেখা হয়েছে, সবাই জানেন অভীক এসএসকেএমের শল্য চিকিৎসা বিভাগের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের চিকিৎসক-পড়ুয়া। কী ভাবে ওই যুবক স্নাতকোত্তর স্তরে সুযোগ পেয়েছেন, তা নিয়েও সবাই অবগত বলে দাবি করা হয়েছে ওই পোস্টে।

এ দিন ‘আইএমএ’-র রাজ্য শাখার তরফে চিকিৎসক অভীক ঘোষ দাবি করেন, তাঁরা নিশ্চিত ওই লাল শার্ট পরা যুবক এসএসকেএমের পিজিটি অভীক। কারণ, ৯ অগস্ট আর জি করে আসা স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক ও ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান বিধায়ক চিকিৎসক সুদীপ্ত রায় যখন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন, পিছনে অভীক ওই লাল শার্ট পরেই দাঁড়িয়েছিলেন। যা সেমিনার রুমের ছবির লাল শার্টের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।

অভীক বলেন, “স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা এবং রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের পিছনে অভীকের দাঁড়িয়ে থাকার ভিডিয়ো রয়েছে। এক সাধারণ পিজিটি কী ভাবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ হয়ে গেলেন? সরকারি আধিকারিক বা স্বাস্থ্য প্রশাসক না হওয়া সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে ঘটনাস্থলে থাকতে পারেন? তিনি যে কোনও তথ্যপ্রমাণ বিকৃত করতে যাননি বা করেননি, সেটা কী ভাবে নিশ্চিত হব!”

‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাস্থলে বাইরের লোকের উপস্থিতি নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলাম। সেখানে লাল, বেগুনি রঙের শার্ট পরা লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ওই সব বিষয়ে পুলিশের যুক্তি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না। পুলিশ ও স্বাস্থ্য-প্রশাসন প্রথম থেকেই তদন্ত ঘোরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।”

এ দিন অভীক দে-কে ফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোন পরিষেবা সীমার বাইরে রয়েছে বলে জানানো হয়। বর্ধমানের নারায়ণদিঘি এলাকায় তাঁর বাড়িতে গেলে পরিজন জানান, তিনি বাড়িতে নেই। পরিবারও গোটা বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চায়নি।

সেমিনার রুমের ভিড়ে বেগুনি শার্ট পরা যুবকের পরিচয় যদিও এখনও কলকাতা পুলিশ জানায়নি। তবে ওই যুবক ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র ঘনিষ্ঠ এবং তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা বিরূপাক্ষ বিশ্বাস বলেই ‘আইএমএ’-সহ চিকিৎসক মহলের একাংশ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কারণ, ৯ অগস্ট কৌস্তভ ও সুদীপ্তের সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়ার যে ভিডিয়ো রয়েছে, সেখানে বিরূপাক্ষকেও ওই রঙের শার্ট পরেই দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও বিরূপাক্ষ বলেন, “যাঁরা কু‌ৎসা রটাচ্ছেন, তাঁরা মানসিক ভাবে বিকৃত। কোথাও কোনও চিকিৎসকের সঙ্গে যদি অপ্রীতিকর কিছু ঘটে, আমি চিকিৎসক হিসেবে অবশ্যই সেখানে যাব। আর জি করে গেলেও ঘটনাস্থল সেমিনার কক্ষে ঢুকিনি। বিল্ডিংয়ের নীচে দাঁড়িয়েছিলাম।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement