আইন হাতে না নিতে আর্জি মুসলিম সমাজের

প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন, ক্ষোভের জায়গা যা-ই থাকুক, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অন্যায়। গণতান্ত্রিক উপায়ে বিরোধিতা নিশ্চয়ই করতে হবে।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৩
Share:

ছবি: পিটিআই।

নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে রাজ্য জুড়ে যে প্রক্রিয়ায় আন্দোলন চলছে তার তীব্র বিরোধিতা করছেন মুসলিম বিশিষ্টজন ও ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন, ক্ষোভের জায়গা যা-ই থাকুক, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অন্যায়। গণতান্ত্রিক উপায়ে বিরোধিতা নিশ্চয়ই করতে হবে। কিন্তু হিংসার পথ বেছে নেওয়া চলবে না।

Advertisement

ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর কথায়, ‘‘কেন্দ্রের নাগরিকত্ব আইন মানুষ মেনে নিতে পারছেন না। তাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নেমে তাঁরা প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু শুক্রবার থেকে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় যে পদ্ধতিতে ট্রেনে পাথর ছোড়া, স্টেশন মাস্টারের ঘরে আগুন জ্বালানো থেকে শুরু করে বাসে আগুন জ্বালানো হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না।’’ ত্বহার আবেদন, ‘‘আন্দোলন অবশ্যই করুন। কিন্তু দয়া করে কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। এমন হিংসাত্মক আন্দোলন করলে যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হচ্ছে সেই রাজনৈতিক দলই সুবিধা পাবে।’’ রাজ্যের সমস্ত মানুষের প্রতি অল ইন্ডিয়া মিল্লি কাউন্সিলের রাজ্য সভাপতি ফজলুর রহমানের আবেদন, ‘‘কারও প্ররোচনায় পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করুন। নচেৎ আন্দোলনের গতিমুখ নষ্ট হবে।’’ জামাতে ইসলামি হিন্দের রাজ্য সভাপতি মৌলানা আবদুর রফিকের কথায়, ‘‘এই আইনের বিরুদ্ধে জনগণকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আন্দোলন করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনে হিংসার আশ্রয় নিলে কখনও ভাল ফল আসতে পারে না।’’ বেঙ্গল ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহম্মদ ইয়াহিয়া জানাচ্ছেন, ‘‘বিজেপি সরকারের ধর্মীয় বিভাজনের নয়া আইনের বিরোধিতা করে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু আন্দোলন করতে গিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা আন্দোলনের গতিমুখটাই বদলে দেবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’’ অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন-এর রাজ্য কমিটির সদস্য মৌলানা নিজামুদ্দিম কাশেমি বলেন, ‘‘নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে যাঁরা হিংসাত্মক ঘটনা ঘটাচ্ছেন, তাঁরা ঠিক করছেন না। আমাদের দল এই ধরনের আন্দোলনের অনুমতি দেয়নি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে আন্দোলন করবেন না কেউ। ’’

আরও পড়ুন: বিজেপির প্ররোচনাতেই এ সব হচ্ছে, বললেন ফিরহাদ ॥ দিলীপ দুষলেন তৃণমূলকে

Advertisement

প্রবীণ অধ্যাপক ওসমান গনির পর্যবেক্ষণ, ‘‘ভারতীয় মুসলিমদের এই করুণ পরিণতি দেখে আমার ঘুম নষ্ট হয়েছে। মানুষ অনেক কষ্টে, যন্ত্রণায় নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের প্রতি আবেদন, শান্তির সঙ্গে গঠনমূলক আন্দোলনের পথ বেছে নিন। আন্দোলনের গতিমুখ নষ্ট হলে আন্দোলনকারীদেরই ক্ষতি হবে।’’ অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মীরাতুন নাহার বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী। কিন্তু গত শুক্রবার থেকে এই নয়া আইনের প্রতিবাদ-আন্দোলন আত্মঘাতী আন্দোলনে পরিণত হচ্ছে। স্বতঃস্ফূর্ত, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন না হলে কেন্দ্রীয় সরকার এই আন্দোলনকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির কাজে লাগাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement