প্রতীকী ছবি।
বছরখানেক আগে মুর্শিদাবাদের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এবং কয়েক জন যুবকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে মাদক খাওয়ানো এবং হোটেলে নিয়ে গিয়ে যৌন ব্যবসায় নামানোর অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। ওই ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, এক যুবককে গ্রেফতার করা ছাড়া তদন্তে আর বিশেষ কিছু করা হয়নি। মেয়েটির গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়নি। যদিও পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়। পুলিশ তদন্তের অগ্রগতি না হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
লালগোলার বাসিন্দা, বছর চোদ্দোর ওই কিশোরী ২০১৯ সালের মার্চ মাসে লালগোলা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। তাতে সে জানায়, স্কুলে যাওয়ার পরে তাকে এবং আরও কিছু মেয়েকে প্রধান শিক্ষিকা প্রার্থনা শেষে আলাদা করে ডেকে পাঠাতেন এবং কিছু যুবককে দিয়ে তাদের বিভিন্ন হোটেলে পাঠাতেন। তার আরও অভিযোগ, হোটেলে নিয়ে যাওয়ার পরে তাদের জোর করে মাদক খাওয়ানো হত এবং যৌন ব্যবসায় নামানো হত। পরে আবার স্কুলে ফিরিয়ে আনা হত। অভিযোগ পেয়ে লালগোলা থানা অষ্টম দাস নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে। সে এখন জামিনে মুক্ত। জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির নির্দেশে মেয়েটিকে হোমেও পাঠানো হয়। এ দিকে দিনের পর দিন মাদক নেওয়ার পরে তা বন্ধ হওয়ায় মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওই কিশোরীর মায়ের দাবি, হোমে চিকিৎসা হলেও মেয়ের অবস্থার অবনতি হয়েছিল। বাড়িতে এনে চিকিৎসা করানোর পরে সে সুস্থ হয়েছে।
মায়ের অভিযোগ, একজনকে গ্রেফতার করার পর পুলিশ আর কিছু করেনি। উল্টে আমার মেয়ের মানসিক চিকিৎসা করার কথা বলেছিল থানা। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে লালগোলা থানার অফিসার ইনচার্জ সৌম্য দে তদন্তের অগ্রগতি না হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘তদন্ত ঠিকঠাক-ই হয়েছে। মেয়েটির শারীরিক অবস্থা বিষয়ে মেডিক্যাল বোর্ড সম্মতি দিলে গোপন জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।’’
প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তদন্তকারী অফিসার সিরাজ ফোনে বলেন, ‘‘মেয়েটি মিথ্যা কথা বলছে। সে নিজের ইচ্ছেতেই সব কিছু করেছে। প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। মেয়েটি আরও কয়েক জন ছাত্রীর কথা বললেও তারা এ ধরনের ঘটনা স্বীকার করেনি।’’
যদিও মুর্শিদাবাদ জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন সোমা ভৌমিক জানাচ্ছেন, মেয়েটি সমিতির সামনে বয়ান দিয়েছে। মেডিক্যাল পরীক্ষাতেও যৌন অত্যাচারের বিষয়টি স্পষ্ট ছিল। আর মাদক না নেওয়ার ফলে যা যা সমস্যা সবই হত। ফলে মেয়েটি মিথ্যা অভিযোগ করেছে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। গোপন জবানবন্দি নেওয়া হলে তদন্ত অন্য দিকে মোড় নিত।’’ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে একাধিক বার ফোন করা হয়। ওই অভিযোগের কথা বলতেই তিনি ফোন কেটে দেন।
এ দিকে, মেয়ে সুস্থ হলেও তাকে আর কোনও দিনই কোনও স্কুলে পাঠাতে রাজি নন তার মা। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলে পাঠাতাম মেয়ে পড়াশোনা করবে বলে। এখন স্কুলকে বিশ্বাস করব কী করে? বিচারই বা কবে পাব?’’