সপরিবারে বন্ধুপ্রকাশ। —ফাইল চিত্র
কখনও বসিরহাট, কখনও দাড়িভিট, কখনও আবার জিয়াগঞ্জ। অশান্তি এবং প্রাণহানির যে কোনও ঘটনায় রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক রং লাগাতে গেরুয়া শিবিরের তৎপরতা বারংবার স্পষ্ট। যা নিয়ে সরব বিরোধীরা।
জিয়াগঞ্জে শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালের সপরিবার হত্যাকাণ্ডের পরেই আসরে নেমেছিল সঙ্ঘ পরিবার। বিতর্কও ঘনীভূত হয়েছিল গেরুয়া শিবিরের ভিতরে। বিজেপি একে ‘রাজনৈতিক হত্যা’ বললেও আরএসএসের বয়ান ছিল অন্য রকম। খাস কলকাতার রাস্তায় পোস্টার পড়েছিল ‘জিহাদি’দের হাতে আরএসএস সমর্থক শিক্ষকের হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে। কিন্তু মঙ্গলবার এক জনকে গ্রেফতার করে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট, ওই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কোনও যোগ নেই। এমনকি, ঘটনায় রাজনৈতিক আক্রোশও পাওয়া যাচ্ছে না।
মেরুকরণের লক্ষ্যেই গেরুয়া শিবির আগেভাগে জিয়াগঞ্জের ঘটনায় রং লাগিয়ে বিভাজনের তাস খেলছিল বলে অভিযোগ করছিল বিরোধীরা। পুলিশের এ দিনের বয়ানের পরে সেই বিতর্ক আরও জোরালো। এই পরিস্থিতিতে এ দিন শুধু জিয়াগঞ্জই নয়, বিজেপি নেতা-কর্মীদের উপরে সব রকম অত্যাচারের অভিযোগ জানাতেই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে গিয়েছিলেন বিজেপির কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, অর্জুন সিংহ, দেবশ্রী চৌধুরী, স্বপন দাশগুপ্ত, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া ও রাজু বিস্তা।
বিজেপি কি না জেনেই জিয়াগঞ্জের ঘটনা নিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করতে শুরু করেছিল? রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে এই প্রশ্নের উত্তরে মুকুল দাবি করেন, ‘‘এই তত্ত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার। জিয়াগঞ্জের ঘটনা পুরোদস্তুর রাজনৈতিক খুন। আজও বন্ধুপ্রকাশ পালের বাবা আমাকে ফোন করেছেন। তিনি গোটা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাইছেন।’’ বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘নবরাত্রিতে পশ্চিমবঙ্গে ৯ জন বিজেপি কর্মীর হত্যা হয়েছে। সবই রাজনৈতিক হত্যা। লোকসভার পরে বাংলায় আমাদের ৩৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। হত্যা থামছে না। স্থানীয় ভোটেও আরও হত্যার পালা শুরু হবে। পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা পুরো ভেঙে যাওয়ায় রাষ্ট্রপতির কাছে এসেছি।’’
তবে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবির দিকে আর যাননি বিজেপি নেতারা। তাঁদের মতে, এত হত্যার পরেও অপরাধীরা গ্রেফতার হয়নি। দলের ২৮ হাজার কর্মী জেলে, যার মধ্যে ২০ হাজারের বিরুদ্ধে ‘গাঁজা’র মামলা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে হত্যা-লীলা রুখতে রাজ্যপালের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে রিপোর্ট চাইতে অনুরোধ করা হয়েছে। বিজয়বর্গীয় জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করবেন নেতারা।
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেই অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি ‘সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতি করে তিলকে তাল করছে। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘খুনের পরে দিলীপ ঘোষেরা দাবি করেছিলেন, নিহত বন্ধুপ্রকাশ আরএসএস কর্মী। পরে নিহতের পরিবার বলল, কখনওই উনি রাজনীতি করেননি। প্রশাসন যখন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করল, তখন নিজেদের মুখ ঢাকার আর জায়গা না পেয়ে বিজেপি নেতারা দিল্লিতে গিয়ে কাঁউকাঁউ করছেন! রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে সিবিআই তদন্তের জিগির তুলছেন!’’
তবে দিলীপবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘রাজ্যের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। তারই বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন। মমতা যখন রিজওয়ানুর রহমানের মৃত্যু নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন, তখন কি তাকে সাম্প্রদায়িক বলা হয়েছিল? আমরা মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করি।’’