মুকুলের মন্তব্য নিয়ে বিতর্কে সাফাই শুভ্রাংশুর। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলে ফিরেও কেন বিজেপি-র গুণগান, তা নিয়ে লাগাতার প্রশ্নবাণ ধেয়ে আসছে। তার মধ্যেই তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের ‘অসংলগ্ন’ মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু। তাঁর দাবি, স্ত্রীর মৃত্যুর ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি মুকুল। তার উপর রাজনীতি সংক্রান্ত নানা চাপ রয়েছে তাঁর মাথায়। দুইয়ে মিলে শরীরের উপরও প্রভাব পড়েছে। সাধারণ কথাও মনে রাখতে পারছেন না। তাতেই তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসেবে কথা বলতে গিয়ে মুকুলের মুখে ভুলবশত বিজেপি-র নাম উঠে এসেছে বলে দাবি শুভ্রাংশুর।
শুক্রবার কৃষ্ণনগরে সংবাদমাধ্যমের সামনে তৃণমূল-বিজেপি-র মধ্যেকার ফারাক গুলিয়ে ফেলেন মুকুল। উপনির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, ‘‘ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি, তৃণমূল পর্যুদস্ত হবে এবং এই কৃষ্ণনগরে নিজেদের স্বমহিমায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে বিজেপি নিজের ক্ষমতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে।’’ চার পাশ থেকে একাধিক বার ভুল ধরিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও বিজেপি-র পক্ষ নিয়েই কথা বলেন মুকুল। পরে ভুল শুধরে নিলেও তেমন বৈকল্য দেখাননি তিনি।
কিন্তু মুকুলের এই মন্তব্যেই শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। প্রশ্ন ওঠে, দুঁদে রাজজীনিক হিসেবে যাঁকে চেনেন সকলে, তাঁর মতো নেতার এমন ভুল হয় কী করে। তৃণমূল থেকে বিজেপি , ফের বিজেপি থেকে তৃণমূল, বার বার ফুল পাল্টে মুকুল নি-জেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন, এমন কটাক্ষও শোনা যায়। কিন্তু মুকুলের অসংলগ্নতার জন্য তাঁর শারীরিক অবস্থাকেই দায়ী করেছেন শুভ্রাংশু।
মুকুলের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া চাইলে শনিবার সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন শুভ্রাংশু। তিনি বলেন, ‘‘মায়ের চলে যাওয়ার ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি বাবা। তার প্রভাব পড়েছে ওঁর শরীরে। দেহে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনেক কথাই মনে করতে পারছেন না। পুরনো ঘটনা তো বটেই, সাম্প্রতিক ঘটনাও বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন। কখনও আবার পর ক্ষণে সম্বিতও ফিরে আসছে। ওঁর শরীর নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন আমরা। এমন পরিস্থিতিতে ওঁর কোনও মন্তব্যকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে না দেখাই উচিত।’’ শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত জীবনে ওঠাপড়া এবং রাজনীতি, সবমিলিয়ে মুকুল অবসাদেও ভুগতে শুরু করেছেন বলে দাবি করেন শুভ্রাংশু।
রাজনৈতিক জীবনে তো বটেই, মুকুলের ব্যক্তিগত জীবনেও গত কয়েক মাসে ঝড় বয়ে গিয়েছে। সপুত্র তাঁর বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফেরা নিয়ে যখন হইচই চারিদিকে, সেই সময় স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হয়েছে তাঁকে। গত ১১ মে তৃণমূলে ফেরেন মুকুল ও শুভ্রাংশু। করোনা থেকে সেরে ওঠার পর চেন্নাইতে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা রায়কে। গত ৬ জুলাই সেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।