রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মুকুল রায় ভোট দিয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থীকেই।
স্পিকার সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, মুকুল রায় বিজেপি বিধায়ক। কিন্তু মুকুল নিজে বলছেন, তিনি বিজেপি বিধায়ক নন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থীকেই।
মুকুলকে নিয়ে নতুন করে অস্বস্তি বাড়ল শাসক শিবিরের। দলত্যাগ আইন থেকে বাঁচাতে তাঁকে বিজেপির বিধায়ক বলেই সরকারি ভাবে দাবি করা হয়। কিন্তু সোমবার মুকুল নিজেই জানিয়ে দিলেন, তিনি বিজেপির বিধায়ক নন। একই সঙ্গে দাবি করলেন, তিনি তৃণমূলের প্রার্থী যশবন্ত সিন্হাকেই ভোট দিয়েছেন।
সোমবার একটু বেলার দিকেই বিধানসভায় আসেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল। ভোটদান পর্ব শেষে গাড়িতে ওঠার পরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কাকে ভোট দিয়েছেন প্রশ্ন শুনেই তিনি বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলকেই ভোট দিয়েছি। হ্যাঁ হ্যাঁ তৃণমূলকেই।’’ এর পরে প্রশ্ন ছিল, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর তোলা ক্রস ভোটিংয়ে বিষয়ে। সে প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই মুকুল বলেন, ‘‘ও সব বাজে কথা, ও সব বাজে কথা।’’ কোন প্রার্থী জিতবে? একটুও সময় না নিয়ে মুকুল বলেন, ‘‘তৃণমূলই জিতবে।’’ কিন্তু খাতায় কলমে বিজেপির বিধায়ক হয়ে কি তিনি সে কথা বলতে পারেন? নির্বিকার মুকুল বলে ফেলেন, ‘‘না, না আমি বিজেপির বিধায়ক নই।’’
প্রসঙ্গত, মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব বিজেপি। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে জয়ী হন মুকুল। কিন্তু, ১১ জুন তৃণমূল ভবনে গিয়ে বিজেপি ছেড়ে শাসকদলে যোগ দেন। তার পর থেকেই তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে কখনও স্পিকার, কখনও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি পরিষদীয় দল। কিন্তু স্পিকারের বক্তব্য, মুকুল এখনও বিজেপিতেই রয়েছেন। তাই তিনি বিজেপির বিধায়ক। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কোনও প্রমাণ নেই। এই পরিস্থিতিতে মুকুলের সোমবারের বক্তব্য তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মুকুল নিজেকে বিজেপি বিধায়ক নন বলার সঙ্গে সঙ্গেই আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘মুকুল রায় যে মহা জালিয়াত সেটা সবাই জানে। আর তৃণমূলও যে মহা জালিয়াতের কারখানা সেটা আজ মুকুল রায়ের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল। সবচেয়ে বড় কথা, মুকুল রায়ের বক্তব্যের পরে বিধানসভার স্পিকারের পদত্যাগ করা উচিত। তার কারণ, আদালতকেও তিনি মুকুল রায়ের অবস্থান সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন যে উনি বিজেপির বিধায়ক।’’
এর পাল্টা তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটটা কোনও দলীয় ভোট নয়। এটা গোপন ব্যালটের ভোট। কোনও দলীয় প্রার্থী থাকেন না, প্রতীক থাকে না। তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কে কাকে ভোট দিয়েছেন তা নিয়ে কে কোন দলে রয়েছেন তা নির্ধারণ হয় না।’’
সোমবার বেলা তিনটের সময় মুকুল আসেন বিধানসভায়। তাঁকে নিয়ে ভোট দিতে যান পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির টিকিটে জিতে তৃণমূলে আসা আরও দুই বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী এবং সৌমেন রায়। ভোটদান শেষে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে কিছু ক্ষণ সময় কাটান মুকুল ও পার্থ। এর পরেই বিধানসভা ছাড়ার সময়ে সংবাদমাধ্যমকে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে ‘বেঁফাস’ মন্তব্য করেন মুকুল।
অতীতেও তিনি তৃণমূলকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন ঠিক উল্টো কথা বলে। তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার পরে কৃষ্ণনগরে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি, তৃণমূল পর্যুদস্ত হবে এবং এই কৃষ্ণনগরে স্বমহিমায় নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে বিজেপি। নিজের ক্ষমতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে।’’ সেই সময় তাঁর পাশে যাঁরা ছিলেন তাঁরা একাধিক বার ভুল ধরিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও বিজেপি-র পক্ষ নিয়েই কথা বলেন মুকুল। যদিও কিছুটা পরে ভুল শুধরে নেন। পরে বীরভূমেও এক বার তৃণমূল ও বিজেপি একই বলে অসংলগ্ন মন্তব্য করেছিলেন।