মুকুল রায়। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলে যোগ দিয়েই ‘কাজ’ শুরু করে দিলেন মুকুল রায়। ফোন করলেন একাধিক বিজেপি বিধায়ককে।তৃণমূলেযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন তাঁদের। প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও ওই বিধায়কদের অনেকেই তাঁদের ঘনিষ্ঠ মহলে ওই ফোনের কথা জানিয়েছেন। বিজেপি নেতৃত্বও মুকুলের এই ফোনের কথা জানতে পেরেছেন। বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা জানিয়েছেন, মুকুলের ফোন সম্পর্কে তাঁরা জানতে পেরেছেন। এ ব্যাপারে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যা করার করবেন।
রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘ওঁর অনেক পূর্ব পরিচিত আছেন। তাঁদেরকে উনি ফোন করতেই পারেন। কারা থাকবেন, কারা যাবেন, তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আয়ারাম-গয়ারামদের নিয়ে বিজেপি চলে না। বিজেপি-র যে ঝড় হয়েছিল তাতে অনেক ধুলোবালি দেবতার মাথায় এসে পড়ে। এ বার সেগুলো নর্দমায় যাওয়ার সময় হয়েছে।’’
শুক্রবার বিকেলে পুত্র শুভ্রাংশুকে নিয়ে মুকুলের ‘ঘর ওয়াপসি’ হয় তৃণমূলে। এরপর রাতে বাড়ি ফিরেই বিজেপি-তে থাকা তাঁর ঘনিষ্ঠ বিধায়কদের ফোন করা শুরু করেন তিনি। শনিবার সকালেও বেশ কয়েক জন বিধায়ককে ফোন করে বিজেপি-র সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। সব মিলিয়ে অন্তত ১০ জন বিজেপি বিধায়ককে ফোন করেছেন তিনি। শাসক দলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ থেকে জঙ্গলমহল, যেখানেই তাঁর ঘনিষ্ঠ বিজেপি বিধায়ক রয়েছেন, তাঁকেই‘বাজিয়ে’ দেখেছেন মুকুল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জঙ্গলমহলের এক বিধায়ক সেকথা স্বীকারও করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মুকুলদা আমাকে ফোন করেছিলেন। কী কথা হয়েছে, তা আমি প্রকাশ্যে বলতে চাই না। তবে আমার জবাব আমি তাঁকে জানিয়ে দিয়েছি। মুকুলদা যে আমাদের ফোন করে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা আমরা দল ও শুভেন্দু অধিকারীকে জানিয়ে দিয়েছি।’’
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়কেও ফোন করেছিলেন মুকুল। তাঁকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা বলেছেন মুকুল। যদিও এই ফোন-পর্বের কথা মানতে চাননি শিখা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে মুকুলদা ফোন করে কোনও প্রস্তাব দেননি। মুকুলদার জন্য রাজনীতিতে এতদূর আসতে পেরেছি, এটা ঠিকই, কিন্তু তিনি দলবদল করলেও আমি বিজেপি ছাড়ব না।’’
এ ব্যাপারে মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ বলেন, ‘‘মুকুল রায় যে আমাদের কয়েক জন বিধায়ককে ফোন করেছেন, সে কথা আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষযে যা করার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী করবেন।’’
শিখার মতোকোনও বিধায়কই মুকুলের ফোন পাওয়া নিয়েপ্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজিহননি। ফোন পাওয়া বিধায়কদের কাছ থেকেই মুকুলের ‘খেলা’ শুরুর কথা জানতে পেরেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বও। বিধানসভায় নিজেদের শক্তি ধরে রাখাই এখন তাঁদের প্রধান চিন্তা। বিধানসভা নির্বাচনেবিজেপি ৭৭টি আসনে জিতেছিল। সাংসদ পদে থাকা অবস্থায় দিনহাটা ও শান্তিপুর থেকে বিধানসভা ভোটে লড়ে জেতা নীশিথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকারকে বিজেপি বিধায়ক পদ থেকে সরে যেতে বলে। ফলে বিজেপি-র বিধায়ক সংখ্যা কমে ৭৫ হয়ে যায়। শুক্রবার কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক মুকুল তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সেই সংখ্যা কমে এখন ৭৪। এর পর মুকুলের ‘খেলা’য় গেরুয়া শিবিরের যদি কোনও উইকেট পড়ে যায়, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে বিজেপি-কে। তারা এখন নিজেদের পরিষদীয় শক্তি ধরে রাখতে মরিয়া।