আহমেদের বাবাকে সান্ত্বনা মুকুলের। পাশে অর্জুন। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
বেছে-বেছে বিজেপি কর্মীদের উপরে হামলা চালাচ্ছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটের পরে রাজ্যে বিজেপির ২৯ জন কর্মী তৃণমূলের হাতে খুন হয়েছেন। বুধবার চাপড়ার সুঁটিয়ায় বিজেপি কর্মী আহমেদ শেখের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এমনটাই দাবি করলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। সেই সঙ্গে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহও।
গত শনিবার, সপ্তমীর দুপুরে খুন হয়েছিলেন আহমেদ শেখ (৫৫)। বিজেপির অভিযোগ, তাদের সক্রিয় কর্মী হওয়ার কারণেই তাঁকে তৃণমূলের লোকজন পিটিয়ে মারে। পরিবারের করফে হায়দার শেখ নামে এক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছে। কিন্তু মুকুল বা তাঁর দলের লোকজন তা যথেষ্ট বলে মনে করছেন না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন দুপুরে গ্রামের একটি মাচায় বসে অনেকে গল্প করছিলেন। সেই সময়ে টোটো চড়া নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হয়। আর তার জেরেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত হায়দার শেখ তেড়ে গিয়ে আহমেদকে এলোপাথাড়ি মারে বলে অভিযোগ। গুরুতর আহত আহমেদকে তেহট্ট গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে হাসপাতালে যান বিজেপির নেতারা। তাঁরা দাবি করেন, আহমেদ শেখ এলাকায় সক্রিয় ভাবে বিজেপি করতেন বলে তাঁকে আগেও হুমকি দিয়েছিল তৃণমূলের লোকজন। এ দিন হুমকির প্রতিবাদ করায় তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। যদিও প্রথম থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে তৃণমূল। তাদের পাল্টা দাবি, রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত ঝামেলার জেরেই এই খুন।
এ দিন নিহতের আহমেদ শেখের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন মুকুল ও অর্জুন। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সংখ্যালঘু-প্রধান এই এলাকায় জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) বলবৎ হওয়ার আশঙ্কায় প্রায় সকলেই চিন্তিত। সমাবেশে মুকুল দাবি করেন, এনআরসি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তৃণমূল মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। সেই সঙ্গে জেলার পুলিশ সুপারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। কারও নাম না-করে মুকুল বলেন, ‘‘এক জন অল্পবয়সি আইপিএস এসেছেন। তাঁকে কৃষ্ণনগরের মাটি চিনতে হবে। তিনি আসার পরে বিজেপির দু’জন খুন হল।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, “আমি জানি, যে সরকারে থাকে তার আদেশ পালন করতে হয়। সবটাই নজরে রাখছি।”
একাধিক বার ফোন করেও কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার জাফর আজমল কিদোয়াইয়ের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে তৃণমূলের নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা দাবি করেন, “কোনটা ব্যক্তিগত আর কোনটা রাজনৈতিক, সেটা না জেনেই মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। মানুষ কিন্তু বুঝতে পারছে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা।”