বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনে (বাঁ দিকে) মুকেশ অম্বানী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।
বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলায় আরও বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করলেন রিলায়্যান্স কর্তা মুকেশ অম্বানী। নিজের নাতিদীর্ঘ বক্তৃতায় মুকেশ বলেন, ‘‘মমতাদির দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের জন্যই বাংলায় লগ্নির আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই রাজ্য এখন বিনিয়োগের গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। আমাদের কাছেও বাংলা এখন বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য।’’ এর পরেই তিনি ঘোষণা করেন, রিলায়্যান্স গোষ্ঠী আগামী তিন বছরে বাংলায় আরও ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।
মুকেশের কথায়, ‘‘ইতিমধ্যেই রাজ্যে ৪৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে রিলায়্যান্স। আগামী তিন বছরে আরও ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।’’ কোন কোন ক্ষেত্রে হবে সেই বিনিয়োগ? রিলায়্যান্স কর্ণধার জানিয়েছেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিক্ষেত্রকে ডিজিটালি আরও উন্নত করার জন্য বিনিয়োগ করা হবে। একই সঙ্গে, টেলি যোগাযোগে জিয়োকে আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর তারা। পাশাপাশি, জৈব শক্তি উৎপাদনে রিলায়্যান্স যে গুরুত্ব আরোপ করেছে, সেই ক্ষেত্রেও বাংলায় বিনিয়োগ করা হবে।
রিলায়্যান্স কর্তা পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেন, টেলি সংযোগে কলকাতা জ়োনে ইতিমধ্যেই ৯৮ শতাংশ ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে গিয়েছে জিয়ো। তা ১০০ শতাংশ করতে চায় রিলায়্যান্স। মুকেশের কথায়, ‘‘বাংলার জিডিপি-ই বলে দিচ্ছে, এই রাজ্য এখন বিনিয়োগের জন্য কতটা উর্বর।’’ মমতার নেতৃত্বের কথা বলতে গিয়ে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর কথা উল্লেখ করেন। মুকেশ বলেন, ‘‘অটলবিহারী বাজপেয়ী যথার্থই আপনাকে অগ্নিকন্যা বলে বর্ণনা করেছিলেন।’’
এ ছাড়াও বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে আরও তিনটি ঘোষণা করেন মুকেশ। কালীঘাট মন্দির সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে তারা। মুকেশ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘সংস্কারের কাজ নীতা (মুকেশের স্ত্রী) এবং আমি তত্ত্বাবধান করছি। এই সুযোগ আমাদের দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞ।’’ দ্বিতীয়ত, বাংলার হস্তশিল্পকে বিপণন করবে রিলায়্যান্স মার্ট। তৃতীয়ত, রাজ্যে হস্তশিল্পের আরও বিকাশের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলবে তাঁর সংস্থা।
রিলায়্যান্সের পাশাপাশি মঙ্গলবার আরও কিছু বিনিয়োগের ঘোষণা করেছেন অন্য শিল্পপতিরা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, নারায়ণা গ্রুপের কর্ণধার তথা চিকিৎসক দেবীপ্রসাদ শেট্টি। আগামী দু’বছরের মধ্যে কলকাতায় একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল গড়ে তুলবে তাঁর সংস্থা। যেখানে হৃদ্রোগ, ক্যানসারের চিকিৎসার পাশাপাশি অঙ্গ প্রতিস্থাপনও হবে। জেকে গ্রুপের কর্তা হর্ষপতি সিঙ্ঘানিয়া খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে দুগ্ধ শিল্পে বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই প্রকল্পে সরাসরি দু’হাজার জনের কাজ হবে।’’
বাংলায় আরও বিনিয়োগের কথা বলেছেন উইপ্রো কর্তা রিশাদ প্রেমজি-ও। তাঁর কথায়, ‘‘রাজারহাটের জমিতে উইপ্রো যে ক্যাম্পাস তৈরি করবে, তা হবে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আমরা বাংলায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের রাস্তায় যেতে চাই।’’ এ ছাড়াও সঞ্জীব গোয়েন্কা, আইটিসি চেয়ারম্যান সঞ্জীব পুরী, বেঙ্গল অম্বুজা গ্রুপের কর্ণধার হর্ষ নেওটিয়া-সহ অন্য শিল্পপতিরা তাঁদের বক্তব্যে বাংলার শিল্প সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।