বাংলায় কৃষকের মন পাওয়ার লড়াইয়ে সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়েকে সামনে রাখছে বিজেপি।
নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে কৃষকের মন পেতেই হবে বুঝে এ বার বড় মাপের কর্মসূচি নিচ্ছে বিজেপি। আর কৃষকের মন পাওয়ার সেই লড়াইয়ে সামনে রাখা হচ্ছে সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়েকে। বিজেপি সূত্রের খবর, খোদ অমিত শাহই লকেটকে ওই দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলে হুগলির সাংসদের উপর তাঁর ‘আস্থা এবং ভরসা’র কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষও বলছেন, ‘‘এত বড় কর্মসূচির জন্য লকেটের উপরে ভরসা করাই যায়। সেই যোগ্যতা তিনি নিজেই প্রমাণ করেছেন।’’
রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ভিনরাজ্যের যে সব নেতা রাজ্যে নির্বাচন প্রস্তুতি তদারকিতে এসেছেন, তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, বাংলায় কৃষকদের মধ্যে দলের ভিত্তি এখনও তেমন জোরাল নয়। রাজ্যে তিন দশকের বেশি সময় বামফ্রন্টকে ক্ষমতায় রাখার পিছনে বড় ভূমিকা ছিল কৃষকদের। ‘পরিবর্তন’ আনতে কৃষকদের নিয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন সাফল্য দিয়েছিল তৃণমূলকে। এখন সেই কৃষকদের ভোট এককাট্টা করতে না পারলে নীলবাড়ি দখলের স্বপ্ন যে অধরাই থেকে যাবে, সেটা কেন্দ্রীয় নেতারা বোঝার পরেই নতুন এই কর্মসূচি নিল বিজেপি। নড্ডা যেমন তার সূচনা করে দিয়ে গেলেন, তেমন ভাবেই কোনও বড় মাপের কেন্দ্রীয় নেতার মাধ্যমে এই কর্মসূচি শেষ হবে বলে জানা গিয়েছে। তার আগে লক্ষ্য পূরণ করার ‘চ্যালেঞ্জ’ মূলত লকেটের উপরে।
দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের পূজারি পরিবারের সন্তান লকেটের বিজেপি-তে উত্থান উল্লেখযোগ্য। রুপোলি পর্দার নায়িকা লকেট ২০১৫ সালে বিজেপি-তে যোগ দেন। তার আগে তিনি ছিলেন তৃণমূলে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূম জেলার ময়ূরেশ্বর আসনে তৃণমূলের কাছে পরাজিত হন। তবে পরের বছরই হন বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী। ২০১৯ সালে হুগলি কেন্দ্র থেকে জিতে লোকসভায় যাওয়া লকেটের গুরুত্ব বাড়ে দলেও। ‘লড়াকু’ ইমেজ তৈরি করা সাংসদকে রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ বার আরও বড় দায়িত্ব। যে প্রসঙ্গে দিলীপ বলছেন, ‘‘বিজেপি-তে ব্যক্তি নয়, টিম হিসেবে কাজ হয়। তবে লকেট’দি এর আগেও রাজ্য জুড়ে কৃষক সুরক্ষা পদযাত্রা করেছিলেন। অধিকাংশ বিধানসভা এলাকায় সফল ভাবে পালিত হয়েছিল সেই কর্মসূচি। এ বারও তিনি সফল হবেন।’’
গত শনিবার বাংলা সফরে এসে ‘কৃষক সুরক্ষা অভিযান’-এর সূচনা করে গিয়েছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। পাঁচটি কৃষকের বাড়িতে মুষ্টিভিক্ষা গ্রহণ করে এক কৃষকের বাড়িতেই মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন। সেই সঙ্গে রাজ্যের নেতাদেরও দেখিয়ে দিয়েছেন, এই কর্মসূচিতে কৃষকের বাড়ি গিয়ে ঠিক কী কী করতে হবে। উল্লেখ্য, সে দিন নড্ডার সঙ্গে ছিলেন লকেটও।
আরও পড়ুন: আমরা সবাই নাগরিক, বার্তা মতুয়াদের, সিএএ নিয়ে বিজেপিকে তোপ মমতার
রাজ্য নেতৃত্বকে কেন্দ্রীয় বিজেপি-র নির্দেশ— রাজ্যে ৪০ হাজারেরও বেশি গ্রামে কৃষকসভা করতে হবে। ৫০ হাজার কৃষকের হাতে দিতে হবে ‘কৃষক সুরক্ষা’ কার্ড। সেই সঙ্গে প্রতি বাড়ি থেকে নিতে হবে এক মুঠো করে চাল। যে যে বাড়িতে যাওয়া হবে, সেখানে তাঁদের বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদী সরকারের কৃষিনীতি বোঝাতে হবে। প্রতিটি বাড়ির দেওয়ালে সেঁটে দিতে হবে বিজেপি-র স্টিকার।
রাজ্য বিজেপি-র ওই বৃহৎ কর্মসূচির ‘মুখ’ লকেট ইতিমধ্যেই সেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন। সোমবার লকেট বলেন, ‘‘নড্ডা’জি যেমন গেরুয়া ঝোলা নিয়ে গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়েছেন, তেমনই যাওয়া হবে। সকলের কাঁধে থাকবে গেরুয়া ঝোলা। এক মুঠো করে চাল সংগ্রহ করে গ্রামে গ্রামে হবে কৃষকভোজ। স্থানীয় নেতারা তো বটেই, রাজ্য নেতারাও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সেই ভোজে অংশ নেবেন।’’ বাংলায় কৃষিপ্রধান এলাকা অনেক বড়। নির্বাচনের আগে এত কম সময়ে গোটা এলাকায় কর্মসূচি পৌঁছে দেওয়া, সভা করা, কৃষকভোজের আয়োজন— সব কি আদৌ সম্ভব? আত্মবিশ্বাসী লকেটের জবাব, ‘‘ইতিমধ্যেই প্রমুখ নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। ১০-১২টি গ্রাম নিয়ে এক একজন প্রমুখ হবেন। তাঁরাই তৃণমূল স্তরে কাজ করবেন। আমিও জেলায় জেলায় ঘুরব।’’
আরও পড়ুন: কয়লা পাচার-কাণ্ডে রাজ্য জুড়ে তল্লাশি ইডির, দুবাই যোগ আরও স্পষ্ট
বিজেপি যে হিসেব কষেছে, তাতে রাজ্যে ৭০ লক্ষের বেশি কৃষক পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে বড় অংশই ছোট বা প্রান্তিক চাষি। এঁদের সকলের কাছেই পৌঁছতে চাইছে গেরুয়া শিবির। একই সঙ্গে দল ঠিক করেছে, এই কর্মসূচির সময় যে যে কৃষকের বাড়িতে যাওয়া হবে, তাঁদের নাম ও ফোন নম্বর নেবেন দলের কর্মীরা। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একটি বড় ‘ডেটাবেস’ তৈরি হয়ে থাকবে। যা নির্বাচনপর্বে যোগাযোগের কাজে লাগানো যাবে।