মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
সমাবেশস্থল থেকে ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে দলনেত্রী জানান, খুব শীঘ্রই বাংলার নিজস্ব টাকায় ১০০ দিনের কাজের একটি প্রকল্প শুরু করা হবে। এই প্রকল্পের নাম ‘খেলা হবে’ দেওয়া হবে বলে জানান মমতা।
সভামঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার অভিযোগ, চারদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কিন্তু চারিদিকে দাঙ্গার নামে ভাগাভাগির চেষ্টা করছে বিজেপি। বিজেপির বিরুদ্ধে মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ এনেও সরব হন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ নেওয়া লোক। মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। ত্রিপুরায় রথযাত্রায় ২৬ জন মারা গেলেন। ট্রেন দুর্ঘটনায় কত মানুষ মারা গেলেন। নমামি গঙ্গে প্রকল্পকেন্দ্রে কত জন দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। আমি কিন্তু কিছু বলিনি। মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করি না। কিন্তু বাংলাতে কেউ মারা গেলেই রাজনীতি শুরু করছে বিজেপি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘২০২৪ সালে নতুন ইন্ডিয়ার জন্ম হবে। বিজেপিকে কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেবেন সাধারণ মানুষ। মণিপুরের মহিলাদের যে ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বিজেপি সরকারের লজ্জা হওয়া উচিত।’’ পাশাপাশি দলনেত্রী আরও বলেন, ‘‘ইন্ডিয়া লড়বে। পাশে সৈনিকের মতো ঝান্ডা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে তৃণমূল। ইন্ডিয়াকে জিততে হবে। বিজেপি হারলে ভারত জিতবে।’’
পঞ্চায়েতে হানাহানির ঘটনা নিয়ে বিরোধীদের তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৭১ হাজার বুথে ভোট হল। কিন্তু গোলমাল হল তিন জায়গায়। ভাঙড়, ডোমকল, ইসলামপুর। আর কোচবিহারে গন্ডগোল হয়েছে। সব থেকে বেশি খুন হয়েছেন তৃণমূল কর্মীরাই। তৃণমূল কর্মীরা কি তৃণমূল কর্মীদের খুন করবে?’’ পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাঁরা হিংসার বলি হয়েছেন, তাঁদের জন্য চাকরি এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণের কথাও ঘোষণা করেন মমতা।
২১ জুলাইয়ের সমাবেশ উপলক্ষে ধর্মতলা চত্বরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে দুপুর দেড়টা নাগাদ সভামঞ্চে বক্তৃতা করতে উঠলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে উঠেই মণিপুরকাণ্ড নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘কোথায় গেল বেটি বাঁচাও স্লোগান? দেশের বেটিরা এখন জ্বলছে।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একশো দিনের টাকা আদায় করতে ২ অক্টোবর অর্থাৎ, গান্ধীর জন্মদিনে ‘দিল্লি চলো’র ডাক অভিষেকের। ২ অক্টোবর দিল্লিতে কৃষিভবন অভিযানে যাবেন বলে জানান তিনি।
আগামী ৫ অগস্ট রাজ্যে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ধর্মতলায় আগত তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে সাংসদ অভিষেক বলেন, ‘‘আগামী ৫ অগস্ট বিজেপির রাজ্যের সব বিজেপি নেতার বাড়ি ঘেরাও করুন। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঘেরাও কর্মসূচি চলবে। বয়স্কদের রাস্তা ছেড়ে দিতে হবে। তবে বিজেপি নেতারা বাড়িতে ঢুকতে বা বেরোতে পারবেন না।’’ পরে মমতা এই কর্মসূচি সংশোধন করে দিয়ে বলেন, বুথ নয়, ব্লক স্তরে এই ঘেরাও হবে। একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, ‘‘বাড়ি থেকে অন্তত ১০০ মিটার দূরত্বে সভা করতে হবে। বাড়ির লোকজনদের ঢুকতে বেরোতে যেন কোনও অসুবিধা না হয়।’’ মমতা, অভিষেক দু’জনেই জানান, এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ভাবে করতে হবে।
অভিষেকের বক্তৃতা শেষে মঞ্চে গান গাইতে ওঠেন বাংলার খ্যাতনামী সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী।
কেন্দ্রের কাছে একশো দিনের টাকা আদায় করতে ২ অক্টোবর ‘দিল্লি চলো’র ডাক অভিষেকের। —নিজস্ব চিত্র।
সমাবেশের মঞ্চে উঠলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে উঠে তিনি বলেন, ‘‘যদি কেউ ভাবে, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তৃণমূলকে দুর্বল করবে, তা হলে ভুল করছে। তৃণমূল বিশুদ্ধ লোহা, যত পোড়াবে, আঘাত করবে, তত শক্তিশালী হবে। ‘ইন্ডিয়া’কেও আটকানো যাবে না।’’
মঞ্চে ভাষণ দিতে উঠলেন যুব তৃণমূল নেত্রী সায়নী ঘোষ। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নিয়োগ মামলায় নাম জড়ায় সায়নীর। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ইডি তাঁকে তলবও করেছিল। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মূল্যবৃ্দ্ধি নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দেগে সায়নী বলেন, ‘‘যাদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই শুরু করেছি, তারা রক্ষকের বেশে ভক্ষক। ন’বছর আগে পকেটে টাকা নিয়ে গিয়ে ব্যাগ ভর্তি সব্জি নিয়ে আসত মানুষ। এখন ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে গিয়ে পকেটে করে সব্জি নিয়ে আসতে হয়।’’
সমাবেশের মঞ্চে ভাষণ দিতে উঠলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম তথা রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সভামঞ্চ থেকে ফিরহাদ বলেন, ‘‘আগে ২১ জুলাই আমাদের লড়াই ছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। কিন্তু এখন আর সিপিএমের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু রাজনৈতিক লড়াই থেমে থাকে না। আমাদের লড়াই এখন ভারতবর্ষ বাঁচানোর।’’
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃষ্টি শুরু হল কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই বক্তৃতা করতে উঠলেন লোকসভার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কালীঘাটের বাড়ি থেকে ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের উদ্দেশে রওনা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঞ্চে ভাষণ দিতে উঠলেন তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘২০২৪ সালে ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে কেউ হারাতে পারবে না। বাংলার মাটি থেকে আওয়াজ উঠবে। বাংলা থেকে সারা ভারতবর্ষে জোটের বার্তা ছড়িয়ে যাবে।’’
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে সমাবেশের মঞ্চে উঠলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাইয়ের শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে মঞ্চে ওঠেন তিনি।
সমাবেশের সভাপতিত্বের দায়িত্ব নিয়ে মঞ্চে কথা বলতে উঠলেন তৃণমূলের সহ-সভাপতি সুব্রত বক্সী। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের স্মৃতি উস্কে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে শহিদ হয়েছিলেন আমাদের কর্মীরা। তাঁদের বলিদান ব্যর্থ হয়নি। গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মানুষ তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছেন।’’ সুব্রতের পর মঞ্চে বক্তৃতা করতে ওঠেন আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইক। প্রকাশের পর মঞ্চে ওঠেন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। মঞ্চে উঠে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে আদিবাসীদের একত্রিত হওয়ার ডাক দেন তিনি।
(বাঁ দিকে) ধর্মতলা চত্বরে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভিড়। (ডান দিকে) ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন। —নিজস্ব চিত্র।
সমাবেশের মঞ্চে উঠেছেন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা। মঞ্চে রয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, শান্তনু সেন, মালা রায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়াও সভায় রয়েছেন চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন। সম্প্রতি যাঁর বিভিন্ন মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক তৈরি করেছে। মঞ্চে রয়েছেন শিল্পী তথা রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনও।
২১ জুলাইয়ের সমাবেশ সভা শুরুর আগে মঞ্চের উপরে উঠে গান গাইতে শুরু করেছেন যুব তৃণমূল কর্মীরা। মঞ্চের সামনে বসে হাজার হাজার শ্রোতা।
২১ জুলাইয়ের সমাবেশের সকালে টুইট করে বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘শহিদ দিবস আমাদের হৃদয়ে অগণিত আবেগ জাগিয়ে তোলে। আজ বাংলার সেই ১৩ জন বীর শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়, যাঁরা অত্যাচারী শক্তির সঙ্গে লড়াই করে এবং গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এঁদের থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে আমি ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাব।’’
২১ জুলাইয়ের সমাবেশের যোগ দিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্থলপথে ও জলপথে ধর্মতলার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন কয়েক হাজার তৃণমূল কর্মী। কুলতলি, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, বারুইপুর, ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিং-সহ জেলা থেকে কলকাতামুখী তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। সকাল থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এলাকাগুলিতে আংশিক মেঘলা আকাশ। কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কলকাতার পথে তৃণমূল কর্মীরা।
মৌসুমী অক্ষরেখা এবং নিম্নচাপের কারণে শুক্রবার হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিতে ভিজতে পারে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি। তবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। শুক্রবার কলকাতায় সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতে পারে যথাক্রমে ৩৩ এবং ২৮ ডিগ্রির কাছাকাছি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের শুক্রবার সকালের পূর্বাভাস অনুযায়ী, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। পাশাপাশি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ওড়িশা সংলগ্ন উপকূলে একটি নিম্নচাপ রয়েছে। এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরবঙ্গেও।
—নিজস্ব চিত্র।
২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দিতে লঞ্চে চেপে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিলেন কোদালিয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল কর্মীরা। চুঁচুড়া থেকে লঞ্চে চেপে কলকাতা আসছেন তাঁরা।