মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপের পরেও থামছে না কোন্দল ফাইল চিত্র।
সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে যে শোরগোল পড়েছে, তা থামা দূরস্থান, ক্রমশই বেড়ে চলেছে। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো যে, ‘শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায়’ বলে নেটমাধ্যমে প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত তাতে সংযোজন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ‘শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায়’ মর্মে একটি পোস্টার-সহ যিনি টুইট করেছেন, ‘নিজেকে হাস্যস্পদ না-করে আপনার চারদিকে যে পরিবর্তন ঘটছে, তাকে সসম্মানে মেনে নিন।’ টুইটের কোথাও কল্যাণের নামোল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু টুইটটি করা হয়েছে ‘উইথএবি’ হ্যাশট্যাগ সহকারে। অর্থাৎ, ‘এবি’, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছি।
কল্যাণের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, শনিবার থেকে তাঁরাও পাল্টা প্রচার নেটমাধ্যমে শুরু করবেন। যেখানে বলা হবে, ‘শ্রীরামপুর আবার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চায়।’ কল্যাণ-শিবিরের দাবি, তারা মনে করছে, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে শ্রীরামপুরের সাংসদের উপর হামলা হতে পারে। সেজন্য দলেরই একটি গোষ্ঠী দায়ী থাকবে। বিষয়টি নবান্নেও জানানো হয়েছে বলে খবর।
শুক্রবার একটা সময়ে তৃণমূলের অন্দরে রটে গিয়েছিল, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণকে শো-কজ করতে চলেছে তৃণমূল। তবে রাত পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটেনি। শোনা যাচ্ছে, দলের অন্দরে কল্যাণকে মৌখিক ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। তিনিও দিনভর সে ভাবে মুখ খোলেননি। তবে সন্ধ্যার পর ফেসবুকে শিরদাঁড়া সংক্রান্ত একটি কবিতা পোস্ট করেছেন। যার জবাবে আবার তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ‘শিরদাঁড়া’ শিরোনামের একটি কবিতা পোস্ট করেছেন। যা দলীয় নেতৃত্বের গোচরে এসেছে। যদিও প্রকাশ্যে কেউ কোনও বিবৃতি দিচ্ছেন না। পুরোটাই চলছে নেটমাধ্যমে।
প্রসঙ্গত, আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দার তাঁর ফেসবুকে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কবিতা ‘মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও’-এর দু’টি পংক্তি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি তাঁর এবং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ছবিও পোস্ট করেছেন।
ঘটনাচক্রে, শুক্রবারই অপরূপা লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতকের পদ থেকে কল্যাণের ইস্তফা দাবি করেছিলেন। তার পরের ঘটনাপ্রবাহ চমকপ্রদ! সূত্রের খবর, অপরূপা কেন ওই দাবি তুলেছেন, তা জানতে চেয়ে আরামবাগের সাংসদকে একটি হোয়াট্সঅ্যাপ করেছিলেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। অপরূপা সেটি সটান পাঠিয়ে দেন অভিষেকের কাছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের একাংশের তরফে সুদীপকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয়, কল্যাণ যখন অভিষেককে আক্রমণ করেছিলেন, তখন কেন বিষয়টি তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়নি।
ঘটনার সত্যতা জানতে সুদীপের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
আগেই তৃণমূলের মহাসচিব তথা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির অন্যতম নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় যোগাযোগ করেছিলেন বিবদমান দু’পক্ষের সঙ্গে। তার পরেও বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি না-থামায় আসরে নামেন মমতা স্বয়ং। তিনি কথা বলেন যুধুধান দু’পক্ষের সঙ্গেই। তার পর থেকে কল্যাণ এবং কুণাল ঘোষ প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়া বন্ধ রাখেন। কিন্তু নেটমাধ্যমে পোস্ট করা বন্ধ হয়নি।
পক্ষান্তরে, পার্থকে দলের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, ওই বিষয়ে যাঁরা যাঁরা বিবৃতি দিয়েছেন, তাঁদের সকলকেই শো-কজ করতে। কিন্তু সেক্ষেত্রে অন্তত ১০ থেকে ১২ জনকে শো-কজ করতে হত। ফলে পার্থ সকলের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তাঁদের বিবৃতি দেওয়া থেকে নিরস্ত থাকতে বলেন। কিন্তু তার পরেও নেটমাধ্যমে প্রচার থামেনি। কল্যাণের সম্পর্কে প্রথমে টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রীর বোনের মেয়ে অদিতি গায়েন। একদা বহুজাতিক সংস্থায় চাকুরিরতা অদিতি অধুনা অভিষেকের সঙ্গেই কাজ করেন। তাঁর পরে টুইট করেন অভিষেকের ভাই আকাশ।
সূত্রে খবর, সেই টুইটগুলি সবই কল্যাণ শিবির দেখেছে। সেগুলি শুক্রবার রাতেই দলনেত্রী মমতার গোচরে আনাও হয়েছে। এখন দেখার, শনিবার বিষয়টি কোনদিকে গড়ায়। তৃণমূলের অন্দরের ওয়াকিবহালদের কথা মানতে হলে, এখনও বিষয়টি অনেকদূর গড়াবে। তবে তার মধ্যেই মধ্যস্থতা এবং মিটমাটের চেষ্টাও জারি থাকবে। দলের এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘সমস্ত কিছুর শুরুই কিন্তু হয়েছিল দলের অন্দরে অভিষেকের নির্দেশ অনুযায়ী ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি প্রণয়ন নিয়ে। তার থেকেই যাবতীয় বিষয়ের সূত্রপাত। কলকাতা পুরসভার ভোটে সে নীতি রূপায়িত হয়নি। তখন থেকেই মনোমালিন্য শুরু হয়েছিল। সেটাই এখন বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ্যে এসে পড়ছে।’’