অর্জুন সিংহ। — ফাইল ছবি।
উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে এক বাসিন্দার কাছ থেকে স্থানীয় কয়েক জন দুষ্কৃতী ১ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন বলে অভিযোগ। টাকা পেয়ে তাঁর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে। তা নিয়েই আবার পুলিশের দিকে আঙুল তুললেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ। তিনি অভিযোগ করলেন, পুলিশের সঙ্গে ‘অপরাধী’রা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাই তাঁদের সাহস বাড়ছে। এর আগে পুলিশের বিরুদ্ধে মুখ খোলা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। তাতেও লাভ হল না বলে ‘ক্ষোভ’ দলেরই অন্দরে।
জগদ্দল পাওয়ার হাউস মোড়ে এক বাসিন্দার কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা তোলা না পেয়ে দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের অভিযোগ ওঠে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অর্জুন অভিযোগ করেন, ‘‘দুষ্কৃতী তাণ্ডব চালাচ্ছিল। পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন এখানকার মানুষ। পুলিশ এফআইআর নিচ্ছিল না। পরে কমিশনারের কাছে গিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশে এফআইআর নেওয়া হয়েছে।’’ এর পরেই পুলিশের দিকে আঙুল তুলেছেন অর্জুন। পুলিশকে লক্ষ্য করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘গ্রেফতার করে হাজতে ঢোকান! মানুষের কাছে আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে বিকৃত বার্তা যাচ্ছে।’’
অভিযোগকারী রামেশ্বরপ্রসাদ যাদব জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে জোর করে প্রবেশের চেষ্টা করে স্থানীয় দুষ্কৃতীরা। জানলার কাচও ভেঙে দিয়েছে। তাঁরা আতঙ্কিত। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁর মা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও তুলেছেন তিনি। রামেশ্বরপ্রসাদ বলেন, ‘‘রাজু তিওয়ারি নামে এক জন হুমকি দিচ্ছেন। বলছেন, টাকা না দিলে থাকতে দেব না। এক লক্ষ টাকা চেয়েছেন। টাকা দিইনি। তাই ভাঙচুর করেছে। সাংসদকে আবেদন করেছি। এসে দেখুন, কী ভাবে ভয়ে রয়েছি। পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশ ওদের শাস্তি দিক।’’ অভিযুক্তেরা কোন দলের, তা যদিও তিনি বলতে চাননি। তিনি জানিয়েছেন, যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলে চলে যাবেন এই ধরনের লোকেরা। এঁদের দল থাকে না। এই রামেশ্বরের বাড়িতে পরিদর্শনে গিয়েই ফের পুলিশের দিকে আঙুল অর্জুনের।
এর আগে ব্যারাকপুরে সোনার দোকানে ঢুকে গুলি চালানোর ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন সাংসদ অর্জুন। তা নিয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধেও জড়িয়েছিলেন। ব্যারাকপুরের ঘটনার পর অর্জুন বলেছিলেন, ‘‘যেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই, সেখানে নিজে ভিভিআইপি নিরাপত্তা নিতে লজ্জা হয়! ব্যারাকপুরের সাংসদ হয়ে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারছি না। এ দিকে আমি নিজে ভিভিআইপি নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি!’’
অর্জুনকে সমর্থন করেছিলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রও। কিন্তু অর্জুনের সরাসরি বিরোধিতা করেন প্রবীণ সাংসদ সৌগত। তিনি বলেছিলেন, ‘‘অর্জুন সিংহের এমনটা বলা ঠিক হয়নি। উনি আমাদের পার্টির বিরোধিতা করেই তো বিজেপির হয়ে জিতেছিলেন! তার পর আবার অভিষেক (বন্দ্যোপাধ্যায়) ওঁকে তৃণমূলে নেন। ওঁর সাংগঠনিক ভাবে যা বক্তব্য, তা শোনা হয়েছে। এখন যদি অর্জুন সিংহ রোজ পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন, তা হলে তো পার্টি এ সব ভাল ভাবে নেবে না।’’
অর্জুন যদিও সৌগতকে পাল্টা কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তিনি জানিয়েছিলেন, অর্জুন সিংহ কখনও নাটক করেন না। তিনি যে নাটক করেন না, তার জবাব দেবে জনগণ। বিষয়টি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগতের সঙ্গে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা অর্জুনের বিবাদ আর যাতে না বাড়ে, সে বিষয়ে দু’পক্ষের সঙ্গেই পৃথক ভাবে কথা বলেছিলেন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস রায়। দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকেও বসার কথাও জানায় দল। তার পরও সেই ভিন্ন সুরেই কথা বলছেন অর্জুন। জগদ্দলের ঘটনায় আবারও আঙুল তুললেন পুলিশের দিকেই।