ব্যারাকপুর সঙ্কট কাটাতে অর্জুন সিংহ এবং সৌগত রায়কে নিয়ে বৈঠকে বসছে তৃণমূল। — ফাইল চিত্র।
গত সপ্তাহে ব্যারাকপুরের সোনার দোকানে ঢুকে দুষ্কৃতীদের গুলিচালনার ঘটনায় প্রকাশ্যে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন তৃণমূলের দুই সাংসদ। যা নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল তৃণমূল নেতৃত্বকে। এ বার সেই পরিস্থিতি কাটাতে দমদম এবং ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক বসতে চলেছেন সভাপতি তাপস রায়।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এই বৈঠকে ডাকা হয়েছে অর্জুন সিং এবং সৌগত রায়কে। ব্যারাকপুরে সোনার দোকানে ডাকাতি এবং প্রাণহানির ঘটনায় তৃণমূলের দুই সাংসদ পরস্পরবিরোধী কথা বলছিলেন। ব্যারাকপুরের ঘটনার পর অর্জুন বলেছিলেন, ‘‘যেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই, সেখানে নিজে ভিভিআইপি নিরাপত্তা নিতে লজ্জা হয়! ব্যারাকপুরের সাংসদ হয়ে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারছি না। এ দিকে আমি নিজে ভিভিআইপি নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি!’’ অর্জুনকে সমর্থন করেছিলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র। কিন্তু অর্জুনের সরাসরি বিরোধিতা করেন প্রবীণ সাংসদ সৌগত। তিনি বলেছিলেন, ‘‘অর্জুন সিংহের এমনটা বলা ঠিক হয়নি। উনি আমাদের পার্টির বিরোধিতা করেই তো বিজেপির হয়ে জিতেছিলেন! তার পর আবার অভিষেক (বন্দ্যোপাধ্যায়) ওঁকে তৃণমূলে নেন। ওঁর সাংগঠনিক ভাবে যা বক্তব্য, তা শোনা হয়েছে। এখন যদি অর্জুন সিংহ রোজ পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন, তা হলে তো পার্টি এ সব ভাল ভাবে নেবে না।’’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘অর্জুন সিংহ তাঁর কথা পার্টির কাছে বলতে পারতেন! মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে বলতেন! ওঁর বক্তব্যের কোনও ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না। উনি যেটা করছেন, সেটা ঠিক করছেন বলেও আমি মনে করি না। তবে আমরা চাই উনি (দলে) থাকুন।’’
সৌগতের এমন মন্তব্যের জবাব কড়া ভাবেই দিয়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন। তিনি পাল্টা বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা আমাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা তো ভাল ভাবে কোনও দিন সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি! অর্জুন সিংহ কোনও দিন নাটক করে না। আর অর্জুন সিংহ যে নাটক করে না, তার প্রমাণ দিয়ে দেবে জনগণ। সৌগত রায় তিন মাস আগে কী বলেছেন, আর তিন মাস পরে কী বলছেন, তার মধ্যেই বিস্তর ফারাক থাকে! তাঁর কথায় আমি কী আর জবাব দেব?’’ বিষয়টি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগতের সঙ্গে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা অর্জুনের বিবাদ আর যাতে না বাড়ে, সে বিষয়ে দু’পক্ষের সঙ্গেই পৃথক ভাবে কথা বলেছিলেন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস। এর পরেই বৈঠক ডাকা হল সব পক্ষকে নিয়ে।
আগামী শুক্রবার টিটাগড়ের জেলা তৃণমূলের অফিসে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক-সহ ১৪ জন বিধায়ক, ব্যারাকপুর-জগদ্দল-টিটাগড় সহ ১৩টি পুরসভার কাউন্সিলর, এবং চেয়ারম্যানদেরও ডাকা হয়েছে এই বৈঠকে৷