—প্রতীকী ছবি।
সংশোধানাগারের হাসপাতালে গিয়ে সোমবার ছেলেকে দেখে এসেছিলেন মা। ছেলের অভিযোগ ছিল, তাঁর কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। মায়ের বয়ান অন্তত সে রকমই। কিন্তু পরদিন সকালেই ছেলের মৃত্যুসংবাদ পেলেন আড়িয়াদহের মুক্তা চট্টোপাধ্যায়। প্রশাসনের তরফে মঙ্গলবার সকালে মুক্তার পুত্র মৌসম চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারকে তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি। কিন্তু মৃত্যুর কারণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে মৌসমের দেহের ময়নাতদন্ত করানোর দাবি তুলেছে তাঁর পরিবার। মৌসমের দেহ সংরক্ষণের আর্জি জানিয়ে মঙ্গলবারেই কলকাতা হাই কোর্টে আর্জি জানানো হয়েছে।
মৃত মৌসমের ‘পটভূমিকা’ সম্পর্কে উত্তর শহরতলির বাসিন্দারা মোটামুটি অবহিত। আড়িয়াদহ তথা দক্ষিণেশ্বর থানা এলাকায় প্রোমোটিং এবং জমি ব্যবসায় ‘সিন্ডিকেট রাজ’-এর অভিযোগ অনেক দিনের। স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য, বছরখানেক আগে পর্যন্তও ওই এলাকায় সেই ব্যবসার অন্যতম ‘নিয়ন্ত্রক’ ছিলেন মৌসম। ২০২০ সাল থেকে তিনি বরাহনগর পুরসভায় সুপারভাইজ়ার পদে চাকরিও করছিলেন। পরিবারের দাবি, চাকরি পাওয়ার পর থেকে ইমারতি দ্রব্যের কারবারের সঙ্গে মৌসমের আর কোনও যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু এলাকার আর এক ‘সিন্ডিকেট-খ্যাত’ নেতা জয়ন্ত সিংহ ওরফে ‘জায়ান্ট’-এর সঙ্গে মৌসমের বিবাদ সুবিদিত ছিল। প্রসঙ্গত, আড়িয়াদহের একটি ক্লাবে ‘দরবার’ বসিয়ে ‘অভিযুক্ত’দের প্রায় মধ্যযুগীয় কায়দায় শাস্তি দেওয়ার একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসায় জয়ন্তকে নিয়ে হইচই শুরু হয়। জয়ন্ত এলাকায় শাসকদলের ছত্রছায়ায় ছিলেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। এখনও তিনি জেলে বন্দি রয়েছেন। পক্ষান্তরে, বেলঘরিয়া এবং দক্ষিণেশ্বর থানায় একাধিক অভিযোগ ছিল মৌসমের বিরুদ্ধেও। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মৌসমকে গ্রেফতার করে দক্ষিণেশ্বর থানা। বিচারবিভাগীয় হেফাজত হওয়ার পর থেকে প্রথমে ব্যারাকপুর এবং পরে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে মৌসমকে রাখা হয়েছিল।
মঙ্গলবার সকালে দমদম সংশোধনাগারের তরফে দক্ষিণেশ্বর এবং বেলঘরিয়া থানাকে মৌসমের মৃত্যুসংবাদ জানানো হয়। জানানো হয়, সোমবার রাতে মৌসমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছিল। সংশোধনাগারের স্বাস্থ্য আধিকারিকের নির্দেশমতো তাঁকে রাতেই আরজি কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হচ্ছিল। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
মৌসমের মা মুক্তা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমি সোমবারেই দমদম সংশোধনাগারের হাসপাতালে গিয়ে ছেলেকে দেখে এসেছিলাম। ও খুব অসুস্থ ছিল। চোখ দুটো বাইরের দিকে ঠিকরে বেরিয়ে এসেছিল। আমার ছেলের চোখ কোনও দিন ওই রকম ছিল না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘ছেলে আমাকে বলল, মা এখানে আমার কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। আমি চোখে স্পষ্ট দেখতে পাই না। কানে শুনতে পাই না। কানে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। বুকেও যন্ত্রণা হয়। কিন্তু কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে আরজি করে নিয়ে যায়। চোখে একটা ড্রপ দিয়ে ছেড়ে দেয়। বুকে ব্যথা হচ্ছে বললে একটা ট্যাবলেট খাইয়ে ছেড়ে দেয়।’’ মৌসম অসুস্থ থাকলেও তাঁকে দেখে আসার পরদিন সকালেই তাঁর মৃত্যুসংবাদ পাবেন বলে ভাবেননি মুক্তা। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ আমার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছিল। আমি হাই কোর্টে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলাম। ১৬ তারিখ শেষ শুনানি হবে শুনছিলাম। তার আগেই ছেলের মৃত্যুসংবাদ এল।’’