Saline Controversy

স্যালাইন-কাণ্ড: প্রসূতিদের শরীরেই কেন বিরূপ প্রতিক্রিয়া, উঠছে প্রশ্ন

স্যালাইনের সমস্যার পাশাপাশি অক্সিটোসিনের মান নিয়ে আলোচনার সময় যে এসেছে, তা-ও মানছেন কর্তাদের কেউ কেউ। কিন্তু আপাতত এ নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার নিদান দেওয়া হয়েছে, দফতর সূত্রে খবর।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:২২
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

একটা ছোট্ট প্রশ্ন। অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি (এ কে আই বা কিডনিতে ক্ষত), অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম (এ আর ডি এস বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা) অথবা রক্তনালী ঝাঁঝরা হয়ে গিয়ে হেমোলাইসিস— অন্য ওয়ার্ডের রোগীদের শরীরে একই স্যালাইন গেলেও খুব বড় কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না। বড় জোর জ্বর বা কাঁপুনি হচ্ছে। মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন শুধুমাত্র প্রসূতিরা। কেন এমন হচ্ছে? বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই ছোট প্রশ্নটি করতে খুব বেশি মেডিক্যাল শিক্ষারও প্রয়োজন হয় না।

Advertisement

গত এপ্রিল থেকে পর পর ডায়মন্ড হারবার, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল, এসএসকেএম, আরামবাগ, উত্তরপাড়ার সরকারি হাসপাতালে যখন প্রসূতি মৃত্যুর ঝড় বয়ে যাচ্ছিল, তখন বার বার এই প্রশ্নটাই কর্তাদের সামনে তুলেছিলেন স্ত্রী রোগ চিকিৎসকদের একটা অংশ। স্যালাইনে মেশানো অক্সিটোসিনই দায়ী কি না, তা খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেছিলেন। অভিযোগ, কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি তাঁদের কথা।

মেদিনীপুর মেডিক্যালের ঘটনায় স্যালাইনের ত্রুটি সামনে আসার পরে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ভবনে কিন্তু সেই কথাটাই উঠেছে। স্যালাইনের সমস্যার পাশাপাশি অক্সিটোসিনের মান নিয়ে আলোচনার সময় যে এসেছে, তা-ও মানছেন কর্তাদের কেউ কেউ। কিন্তু আপাতত এ নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার নিদান দেওয়া হয়েছে, দফতর সূত্রে খবর। দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এ দিন তড়িঘড়ি অক্সিটোসিন সরবরাহকারী কর্নাটকের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এক শীর্ষ কর্তা। তাঁদের কাছে কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে ওই তথ্য পাঠানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলেও খবর। কী কী তথ্য চাওয়া হয়েছে? ওই কর্তা বলেন, ‘‘সে নিয়ে এখনই মন্তব্য করা যাবে না।’’

Advertisement

স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকদের সংগঠন বেঙ্গল অবস্টেট্রিকস অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি বাসব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেন বিষয়টি এত দিন ধরে ধামাচাপা দিয়ে আসা হয়েছে, তাতে কার স্বার্থসিদ্ধি হয়েছে, জানি না। শুধু এটুকু বলতে পারি, সময়ে সতর্ক হলে এত জন মায়ের, এ ভাবে বেঘোরে মৃত্যু হত না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অক্সিটোসিন এবং ভ্যাসোপ্রেসিন, দু’টিই পেপটাইড হরমোন। উৎপাদন সংস্থার অভিজ্ঞতা, উৎপাদনের যথাযথ পরিকাঠামো না থাকলে একটির জায়গায় কোনও ভাবে অন্যটি ওষুধে এলে এবং তা শিরায় প্রবেশ করলে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।’’ কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রী-রোগ বিভাগের প্রধান বলেন, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বার বার অক্সিটোসিনের মান নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছে। এ রাজ্যে সে নিয়ে উচ্চবাচ্চই হয়নি। ২০১৯ সালে কর্নাটকের ওই সংস্থার সরবরাহ করা অক্সিটোসিনের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আইএমএ। তার পরেও এখানে হেলদোল হয়নি।’’

তদন্তে অতিরিক্ত অক্সিটোসিন ব্যবহারের উল্লেখ থাকলেও সে নিয়ে কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক বলেন, ‘‘মাস কয়েক আগে মাত্র দু’ইউনিট অক্সিটোসিন দিয়েছিলাম প্রসূতিকে। তাঁকেও কিন্তু বাঁচানো যায়নি। তাই অতিরিক্ত ব্যবহারের অভিযোগখাটছে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement