বছরের শুরুতেই আশঙ্কার মেঘ বেসরকারি বাস পরিষেবায়। —নিজস্ব চিত্র।
নতুন বছরে বাতিল হতে পারে আড়াই হাজারের বেশি বেসরকারি বাস। কলকাতা হাইকোর্টের পুরনো এক নির্দেশে এমনটাই হতে চলেছে। তাই ২০২৪ সাল শুরু হতেই আশঙ্কার প্রহর গুনতে শুরু করেছেন বেসরকারি বাসমালিকেরা। তাঁদের মতে, কলকাতা হাই কোর্টের এই নির্দেশ কার্যকর হলে এক দিকে যেমন বেসরকারি বাস পরিষেবা ভেঙে পড়বে, তেমনি কলকাতা শহরে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠবে। ঘটনায় প্রকাশ, ২০০৯ সালের পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের একটি মামলার ভিত্তিতে কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় যে, ১৫ বছরের বয়সসীমা পেরিয়ে গেলে আর কোনও বাস শহরে চালানো যাবে না। শহর কলকাতার পরিবেশ রক্ষার জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিষয়টি পাঠিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্টে।
মামলাকারী তথা বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বলেন, “এখনও সেই মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। অথচ কলকাতা হাই কোর্টের রায় মেনে এই বছর কয়েক হাজার বাস বাতিল করে দেওয়া হবে। আমরা চাইছি এ ক্ষেত্রে পরিবহণ দফতর সদর্থক পদক্ষেপ নিয়ে বাস চালানোর মেয়াদ বৃদ্ধি করুক।” তিনি আরও বলেন, “কোভিড সংক্রমণের সময় বেসরকারি বাস চলেনি। লকডাউনের কারণে যাবতীয় পরিবহণ পরিষেবা বন্ধ ছিল। অথচ সেই সময়কেও ১৫ বছরের মধ্যে ধরে নেওয়া হচ্ছে। আর একসঙ্গে এত সংখ্যায় বাস বাতিল হয়ে যাওয়ার পর বেসরকারি বাসমালিকদের অবস্থা এমন নয় যে, পকেটের টাকা খরচ করে সঙ্গে সঙ্গে এত সংখ্যায় নতুন বাস রাস্তায় নামানো যাবে। তাই আমরা সব ক্ষেত্রেই আদালত এবং পরিবহণ দফতরকে ভেবে দেখার কথা বলব।” বাসমালিকদের একাংশের দাবি, নতুন প্রযুক্তির বাস রাস্তায় নামাতে গেলে কমপক্ষে খরচ হবে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা। এখন পরিবহণ শিল্পের যা অবস্থা তাতে বাসমালিকদের পক্ষে এত টাকা ঋণ নিয়ে নতুন বাস নামানো সম্ভব নয়। তাই বিকল্প কিছুর কথা ভাবতেই হবে সরকারকে। আদালতের রায়ে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ১৫ বছর বয়সসীমার ঊর্ধ্বে চলে যাওয়া বাসগুলি বন্ধ করে দিতে হবে।
পরিবহণ দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আদালতের নির্দেশে যদি জুলাই মাসের মধ্যে এই বিরাট সংখ্যক বেসরকারি বাস রাস্তায় না নামে, তা হলে কলকাতা শহরের একাধিক রুট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বেশ কিছু বাসমালিকদের সংগঠন পরিবহণ দফতরকে এই বিষয়ে অবগত করিয়েছেন বলেই খবর। তবে এখনও এই সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবহণ দফতর কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেই জানা গিয়েছে। বর্তমানে কলকাতায় প্রতি দিন চার থেকে পাঁচ হাজার বেসরকারি বাস চলে। কিন্তু আদালতের নির্দেশ কার্যকর হলে আর মাস ছয়েক পরে এই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন বেসরকারি বাসমালিকেরা। ইতিমধ্যেই বেসরকারি গাড়ির জরিমানা মকুব করে বেশি সংখ্যায় বেসরকারি বাস রাস্তায় নামানোর উদ্যোগ নিয়েছে পরিবহণ দফতর। কিন্তু এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন বাসমালিকেরা। অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই সমস্যার সমাধান করতে হলে পরিবহণ দফতরকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। ২০০৯ সালে যখন আদালত নির্দেশ দিয়েছিল পরিবহণ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে তখন থেকেই সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। সরকারের এখন উচিত যে সব বাসমালিকেরা পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান তাঁদের ধরে রাখা, পাশাপাশি নতুনদেরও এই ব্যবসায় আসার সুযোগ করে দেওয়া। না হলে এই বিরাট সংখ্যক বাস বাতিল হলে এক দিকে যেমন প্রচুর মানুষ কর্মহীন হবেন, তেমনি যাত্রীদের ভোগান্তির সীমা থাকবে না।”