জ্বরে শিশুদের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে হাসপাতেল ভর্তির সংখ্য়াও। নিজস্ব চিত্র।
এ বার পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে অজানা জ্বরে আক্রান্ত হল ৪২ জন শিশু। দিন কয়েকের ব্যবধানে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জ্বর, সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে পর পর শিশু ভর্তি হওয়ায় আতঙ্ক বাড়ছে জেলা জুড়ে। ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে এক জনের অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে শিশুদের জন্য ৫৫টি শয্যা রয়েছে। তার মধ্যে জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৪২ শিশু। আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়লে পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়েও একটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে হাসপাতালে।
দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার ধীমান মণ্ডল বলেন, “শিশুরা ভাইরাল জ্বর নিয়েই ভর্তি হয়েছে। এক সঙ্গে ৪২ শিশুর জ্বর, সর্দি বিশেষ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। তবু কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চাইছি না আমরা।” তিনি আরও জানান, শিশু বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে একটি বিশেষ দল গঠন করে শিশুদের পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। তবে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি বলেই দাবি দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপারের।
অন্য দিকে, শিশুদের জ্বর নিয়ে আতঙ্কের মধ্যেই বুধবার জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে এসেছিল পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ওই বিশেষজ্ঞ দল এসে শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। ওই প্রতিনিধি দলের সদস্য তথা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম দাস বলেন, “জলপাইগুড়ি মহকুমা হাসপাকালে ভর্তি হওয়া শিশুরা সকলেই ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত।” তাঁর দাবি, যে তিন শিশুর মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে তাদের কারও ভাইরাল জ্বরে মৃত্যু হয়নি। মৃতদের মধ্যে দু’টি ‘প্রিম্যাচিওরড’ শিশু ছিল। এবং এক জনের হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল। তবে এদের কারও ভাইরাল জ্বরে মৃত্যু হয়নি। জলপাইগুড়ি মহকুমা হাসপাতালে মোট ৮৮ জন শিশু ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে মঙ্গলবারই ২২ জনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ দলের এক সদস্য জানিয়েছেন, কারও অবস্থাই আশঙ্কাজনক নয়। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে ৪৯ জন শিশুর নমুনা পাঠানো হয়েছিল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে এক জন ডেঙ্গি এবং অন্য জন জাপানি এনকেফালাইটিসে আক্রান্ত। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ১৩০ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ইন্দ্রজিৎ সাহা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। রিপোর্টে দেখা গিয়েছে তাদের মধ্যে ৫ জন ডেঙ্গি, ৬ জন স্ক্রাব টাইফাস এবং এক জন কোভি়ডে আক্রান্ত। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের পাশাপাশি ধূপগুড়ি, মালবাজার এবং বানারহাট হাসপাতালেও ভাইরাল জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও। দু’টি জেলা থেকেই রায়গঞ্জ গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছে অনেক শিশু। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১০ জন শিশু। মঙ্গলবার দুপুরের পরে সংখ্যাটা আরও বেড়েছে বলেই হাসপাতাল সূত্রে খবর। মঙ্গলবারই জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ১৪ জন শিশু ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ভর্তি হওয়া শিশুদের বয়স ৫০ দিন থেকে ৩ বছর পর্যন্ত। তবে, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বেশির ভাগ শিশুর শারীরিক অবস্থা সামান্য উন্নতি হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।
মুর্শিদাবাদের নানা প্রান্তে অজানা জ্বরে আক্রান্ত বেশ কিছু শিশু। এ বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি অমিয় কুমার বেরা জানান, এই জ্বরের সঙ্গে করোনার কোনও সম্পর্ক নেই। প্রতি বছর পূজোর আগে ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হন শিশুরা। গত এক সপ্তাহে ১০০ পেরোয় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। তবে এই মুহূর্তে ৯৪ জন শিশু ভর্তি আছে মেডিক্যাল কলেজে। যারা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে অন্য কোনও রকম উপসর্গ ধরা পড়েনি।
কোচবিহার জেলা জুড়ে শিশুদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। জেলার হাসপাতালগুলিতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে শিশুরা। জ্বর, সর্দি, কাশি উপসর্গ ধরা পড়েছে শিশুদের মধ্যে। তাতেই উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষ এবং স্বাস্থ্য দফতরের। ইতিমধ্যেই কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জে ৬ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে। জ্বর সর্দি-কাশি নিয়ে মেখলিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে। পরে জলপাইগুড়িতে স্থানান্তরিত করা হয়। শিশুটির মধ্যে নিউমোনিয়ার উপসর্গ ছিল বলেই চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।