প্রতীকী ছবি।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত রাজ্যে জ্বরে আক্রান্ত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে একমাত্র হাওড়ার পিঙ্কি দেবনাথের ক্ষেত্রে ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি লেখা হয়েছে।
দেগঙ্গার শিমুলিয়ার বাসিন্দা আছেমা বিবি (৫৫), উত্তর মাটিকুমড়া মাঝেরপাড়ার রিনা বিবি (২৬), বাদুড়িয়ার রাজবাড়িয়া গ্রামের তাহেরুন পারভিন (১৯) জ্বরে ভুগছিলেন। তিন জনেরই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কেন মৃত্যু সেটা জানতে পারেনি তাঁদের পরিবার।
ধুম জ্বর, মাথা ও সারা গায়ে যন্ত্রণা, পেট ব্যথা, বমি, ধীরে ধীরে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়া, খিচুনি— সব উপসর্গ মিলে যাচ্ছে। শুধু ডেথ সার্টিফিকেট ডেঙ্গি বলছে না। ডেঙ্গি দূরে থাকুক, নির্দিষ্ট কোনও রোগের উল্লেখই তাতে নেই।
বেড়াচাঁপা চন্দ্রকেতুগড় মহম্মদ শহীদুল্লাহ কলেজে বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী তাহেরুনের মামা বাদুড়িয়ার কংগ্রেস বিধায়ক কাজি আব্দুর রহিম দিলু। বিধায়কের দাবি, বাদুড়িয়ায় এ পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবারই উপসর্গ ডেঙ্গির মতো হলেও এক জন ছাড়া ডেথ সার্টিফিকেটে কারও মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি বলে লেখা হয়নি। জেলা প্রশাসন অবশ্য এত জনের মৃত্যুর খবর মানতে চায়নি।
কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে বুধবার সকালে মনোহরপুকুরের বাসিন্দা ৮ বছরের মনীষা ধাড়ার মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, একটি সরকারি হাসপাতাল এবং ছ’টি নার্সিংহোম ঘুরেও ওই বালিকার জন্য আইসিইউ-তে একটি শয্যার ব্যবস্থা করা যায়নি। মঙ্গলবার মধ্য রাতের পরে তাকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও আইসিইউ-তে শয্যা মেলেনি। ওই হাসপাতালেই এদিন সকালে মারা যায় সে। ডেথ সার্টিফিকেট বলছে, মনীষার মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সেপ্টিক উইথ সেপ্টিসেমিয়া।
হাওড়ার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৩৪ বছরের পিঙ্কি সোনকার মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে অবশ্য ডেঙ্গি কথাটা লেখা রয়েছে। হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তীর দাবি, ওই মহিলা ছট উপলক্ষে বিহার গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ২৮ অক্টোবর তিনি হাওড়া ফেরেন। ২ নভেম্বর থেকে তাঁর জ্বর হয়। অর্থাৎ মহিলা বিহার থেকে রোগটা নিয়ে এসেছেন বলে দাবি করতে চাইছে হাওড়া পুরসভা।
কলকাতার লাগোয়া নিউটাউনের প্রমোদগড়ের জ্বরের রোগী ৪৪ বছরের মাধুরী বৈদ্যর মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় একটি হাসপাতালে। তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ লেখা হয়েছে। নিউটাউন-কেষ্টপুরে ওই এলাকায় গত পাঁচ দিনে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হয়ে মৃত্যু হয়েছে
চার জনের।
শিলিগুড়িতেও জ্বরে আক্রান্ত এক জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকালে খালপাড়ার একটি নার্সিংহোমে মারা যান মাটিগাড়ার নিউ পালপাড়ার বাসিন্দা সন্তু পাল (৩২)। ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে, মাল্টি অর্গান ডিসফাংশন সিনড্রোম ইন ভাইরাল হেমারেজিক ফিভার। শিলিগুড়ি পুর এলাকা এবং মহকুমা মিলিয়ে জ্বর, ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩ জন।