West Bengal News

চাপের মুখে মোর্চা, ১২ই পর্যন্ত বন্‌ধ স্থগিত

১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত বন্‌ধ। সিদ্ধান্ত নিল মোর্চা। বৃহস্পতিবার বিমল গুরুঙ্গকে ছাড়াই বৈঠকে বসল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটি। বন্‌ধ আপাতত তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হল সেখানেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ১৮:০৫
Share:

আপাতত স্থগিত বন্‌ধ। জানিয়ে দিলেন বিনয় তামাঙ্গরা। ছবি: পিটিআই।

বন্‌ধ উঠে গেল পাহাড়ে। বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে পাহাড়ে ফিরেই কার্শিয়াঙে জনসভা করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিনয় তামাঙ্গ। পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর ডাক দিলেন। তার পর তামাঙ্গের নেতৃত্বেই বৈঠকে বসল মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটি। সেখানেই বন্‌ধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়ে দিল মোর্চা নেতৃত্ব। ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাহাড়ে কোনও বন্‌ধ থাকছে না বলে মোর্চার তরফে জানানো হয়েছে। তবে মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গের অনুপস্থিতিতেই যে ভাবে কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠকে বসল এবং বন্‌ধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিল, তাতে মোর্চায় বিভাজনের ছবি স্পষ্ট। আত্মগোপন করে থাকা বিমল গুরুঙ্গ কী প্রতিক্রিয়া দেন, সে দিকেই এখন নজর পাহাড়ের রাজনৈতিক শিবিরের।

Advertisement

এই শুনশান ছবি আর দেখতে চাইছেন না পাহাড়ের মানুষও। ছবি: পিটিআই।

পাহাড়ে বন্‌ধ যে তুলে নেওয়া হতে পারে, বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপারা সে ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন। ২৯ অগস্ট নবান্নে পাহাড় নিয়ে যে সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছিল, সেখানেই তামাঙ্গরা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন চলবে, কিন্তু পাহাড়ে স্বাভাবিকতা ফেরাতে মোর্চা এ বার ইতিবাচক ভূমিকা নেবে। বিনয় তামাঙ্গদের এই অবস্থানে অবশ্য মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুঙ্গ মোটেই খুশি হননি। গোপন ডেরা থেকেই তিনি জানিয়ে দেন, বন‌্ধ তোলা হবে না। বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপারা পাহাড়ের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলেও তিনি তোপ দাগেন। কিন্তু গুরুঙ্গের তোপে লাভ কিছু হল না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত। দীর্ঘ বন্‌ধে পাহাড়ের অর্থনীতি ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াঙের মানুষ এ বার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইছেন। রাজ্য এবং কেন্দ্রও মোর্চাকে জানিয়ে দিয়েছে, বন্‌ধ তুলতে হবে। ফলে মোর্চা নেতৃত্বের উপর চাপ ক্রমশ বাড়ছিল। তাই দার্জিলিঙের বাইরের কোনও গোপন ডেরা থেকে গুরুঙ্গ যতই হুঙ্কার ছাড়ুন, বিনয় তামাঙ্গরা আর সে হুঙ্কারকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। গুরুঙ্গকে ছাড়াই বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসল মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটি। সিদ্ধান্ত নিল, ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত থাকছে বন্‌ধ।

Advertisement

আরও পড়ুন: পাহাড় খুলছে, ক্ষিপ্ত গুরুঙ্গ

২৯ অগস্ট নবান্নে সর্বদল বৈঠকের পর থেকে কলকাতাতেই ছিলেন বিনয় তামাঙ্গ। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ৩১ অগস্ট তিনি পাহাড়ে ফিরলেন। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ তিনি বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছন। মোর্চার কর্মী-সমর্থকরা শতাধিক গাড়ির মিছিল নিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন বিনয় তামাঙ্গকে স্বাগত জানাতে। বাগডোগরা থেকে বিনয় তামাঙ্গ সোজা কার্শিয়াং চলে যান। কার্শিয়াং রেল স্টেশনের বাইরে তিনি প্রকাশ্য জনসভা করেন। জনসভা থেকে দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি বিনয় তামাঙ্গের বার্তা— গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে আন্দোলন চলবে। কিন্তু পাহাড়ে আগে শান্তি ফেরাতে হবে, অচলাবস্থা কাটাতে হবে।

আরও পড়ুন: বৈঠকের পরদিনই ভিড়ে ঠাসা লালকুঠি

জনসভা শেষ হওয়ার পরেই বৈঠকে বসে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই বৈঠকে স্থির হয়, ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত থাকছে বন্‌ধ। ১২ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় পাহাড়ের দলগুলিকে নিয়ে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে বসবে রাজ্য সরকার। মোর্চা সূত্রে জানানো হয়েছে, সেই সর্বদল বৈঠকে রাজ্য সরকারের অবস্থান দেখে নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি স্থির করবে মোর্চা। তার আগে পর্যন্ত বন্‌ধ স্থগিত রেখে মোর্চা বার্তা দিতে চায়, পাহাড়ে অচলাবস্থা কাটাতে মোর্চার মনোভাব ইতিবাচক।

পাহাড়ে ক্রমশ বন্‌ধ বিরোধী জনমত যে তীব্র হচ্ছে, সে আভাসও কিন্তু পাওয়া যাচ্ছিল। সর্বদল বৈঠকে বিনয় তামাঙ্গরা কিছুটা নরম অবস্থান নিয়েছেন এবং এর ফলে বন্‌ধ উঠতে পারে, এমন আভাস পেয়েই বেশ কিছু এলাকায় দোকান-বাজার খুলতে শুরু করেছিল। তাই বিনয় তামাঙ্গদের ঘোষণার পরে আরও দ্রুত স্বাভাবিকতা ফিরবে বলে আশা করছে প্রশাসন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement