তবলিয়া বিক্রম ঘোষ (বাঁ দিকে) এবং তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী জয়া শীলের (ডান দিকে) সঙ্গে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত (মাঝে)। রবিবার। কলকাতায়। ছবি: সংগৃহীত।
কলকাতা সফরের শেষ পর্বে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত দেখা করলেন বাংলার দুই খ্যাতনামীর সঙ্গে। রবিবার তিনি প্রথমে যান অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। তার পরে যান তবলিয়া বিক্রম ঘোষ এবং তাঁর অভিনত্রী স্ত্রী জয়া শীলের বাড়ি। বিক্রমের পরিবারের সঙ্গেই দীর্ঘ ক্ষণ সময় কাটান রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের প্রধান। এমনকি, তাঁর বাড়িতেই মধ্যাহ্ন ভোজও সারেন। তার পরেই কলকাতা ছেড়ে পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন ভাগবত।
শনিবার দুপুরেই অসম থেকে বাংলায় এসেছিলেন সঙ্ঘপ্রধান। কলকাতায় এসে শনিবারই তিনি দেখা করেন প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাসের সঙ্গে। উল্লেখ্য, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূলের যোগাযোগের অভিযোগ তুলে খবরের শিরোনামে আসেন উপেন। লোকসভা ভোটের আগে হঠাৎ বাংলায় এসে বিজেপির পিতৃপ্রতিম আরএসএসের প্রধান সেই উপেনের সঙ্গে দেখা করায় জল্পনা তৈরি হয়েছিল।
একই রকম আলোচনা শুরু হয়েছিল সঙ্ঘপ্রধান প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ চৌবের বাড়িতে যাওয়ায়। ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন গোলরক্ষক কল্যাণ গত বিধানসভা নির্বাচনে মানিকতলা আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। শেষমেশ জিততে পারেননি। তবে ভোটে হারার পর ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি পদে দায়িত্ব নেন তিনি। শনিবার সেই কল্যাণের সঙ্গেই দেখা করেন ভাগবত। এর পরই রবিরার দেখা করেন বাঙালি অভিনেতা ভিক্টরের সঙ্গে।
ভিক্টর অভিনয়ের পাশাপাশি একটা সময়ে রাজনীতিও করতেন। দীর্ঘ সময় সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠন ‘সংস্কার ভারতী’র রাজ্য সভাপতি ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে তৎকালীন কলকাতা উত্তর-পশ্চিম আসন থেকে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীও হন ভিক্টর। তিনিই ছিলেন রাজ্যে বিজেপির প্রথম তারকা প্রার্থী। ভিক্টরকে গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার পদ্মভূষণ সম্মানও দেয়। কিন্তু অভিনেতা তার অনেক আগেই সরে এসেছিলেন রাজনীতি থেকে। রবিবার সেই ভিক্টরের সঙ্গে সঙ্ঘপ্রধানের সাক্ষাৎ নিয়ে জল্পনার মধ্যেই ভিক্টর একটি বিবৃতি দেন। ইংরেজিতে লেখা ওই বিবৃতির বক্তব্য, ‘‘আমি আরএসএসের সঙ্গে ওড়িশায় ঘূর্ণিঝড়ের সময়, উত্তরাখণ্ডের ভূমিকম্পের সময় ত্রাণ এবং উদ্ধারের কাজ করেছি। ওঁরা যে ভাবে ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে সংরক্ষণ করা চেষ্টা করেন, তাকে আমি শ্রদ্ধা করি।’’
অন্য দিকে, শনি এবং রবিবার সঙ্ঘপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া এই তিন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কোনও না কোনও ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তবলিয়া ঘোষের তেমন কোনও ইতিহাস নেই। তিনি কখনওই সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাঁর বাড়িতেভাগবতের মধ্যাহ্নভোজ ঘিরেও তাই জল্পনা শুরু হয়েছে।
যদিও আরএসএস সূত্রে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। এটি পুরোপুরি বিশিষ্টদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন। যা সঙ্ঘ নিয়মিত করে থাকে। এই কর্মসূচি প্রতি বছরই এই সময়ে হয়ে থাকে। অতীতে এমন কর্মসূচিতে সঙ্গীতশিল্পীঅজয় চক্রবর্তী, রশিদ খান, সরোদবাদক তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের বাড়িতেও গিয়েছেন ভাগবত। যদিও আরএসএসের এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
শনিবার ভাগবতের পাশাপাশি একই ধরনের কর্মসূচি নিয়ে বাংলায় এসেছিলেন আরএসএসের আরও এক প্রধান কর্তা দত্তাত্রেয় হোসবোলে। তিনি দুর্গাপুরে শনি ও রবিবার মধ্যবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সঙ্ঘকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, দুই সঙ্ঘকর্তার বঙ্গে আগমনের আড়ালে রয়েছে রাজ্যে হিন্দুত্বের হাওয়া তৈরি করা। সামনে রামমন্দিরের উদ্বোধন। তার আগে এই হাওয়ার প্রভাব যাতে লোকসভা নির্বাচনে পড়ে সে জন্যই সঙ্ঘের নেতাদের নির্দেশ দিতে এসেছিলেন সঙ্ঘপ্রধান এবং সঙ্ঘকর্তা।