—ফাইল চিত্র।
কেরল, পঞ্জাব ও রাজস্থানের পরে এ রাজ্যের বিধানসভাতেও পাশ হয়ে গেল সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী প্রস্তাব। রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে এবং প্রস্তাবের উপরে সংশোধনী এনেও ‘ভুল বার্তা’ যাওয়া রুখতে ভোটাভুটিতে গেল না বিরোধী বাম ও কংগ্রেস। তাঁর সমালোচনা না করে বাম ও কংগ্রেসকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘মোদী আর দিদি এক নয়! আপনাদের এই স্লোগান এক দিন ব্যুমেরাং হবে!’’ পাশাপাশিই মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, তাঁর বিরোধিতা করার জন্য ৩৬৫ দিন পাওয়া যাবে। এখন বিজেপির নীতির বিরোধিতা হোক একযোগে।
বিধানসভায় আনা প্রস্তাবের বয়ানে এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর প্রত্যাহারের দাবি তোলা হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। প্রস্তাবের উদ্দেশ্য এবং মর্মার্থের সঙ্গে নীতিগত ভাবে সহমত হয়ে বাম ও কংগ্রেস তাতে সমর্থন দিয়েছে। তবে আক্ষরিক অর্থে এই প্রস্তাব সর্বদল হয়নি। বিধানসভার কার্যবিধির ১৬৯ ধারায় সরকারি তরফে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সোমবার বিশেষ অধিবেশনে প্রস্তাব পেশ করেন, খসড়ায় বিরোধীদের সই করার সুযোগ ছিল না। আবার বিধানসভায় আলোচনার সময়ে প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপির স্বাধীন সরকার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। বাম ও কংগ্রেস প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত হয়েই তাকে আরও ‘জোরালো’ করার কথা বলে কিছু সংশোধনী আনলে তা গৃহীত হয়নি। তবে বিজেপি-বিরোধিতায় ভিন্ন সুরের বার্তা যাতে না যায়, তার জন্য সংশোধনীর উপরে ভোটাভুটি চাননি কংগ্রেস ও বাম নেতারা।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ফের বুঝিয়ে দেন, সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে অ-বিজেপি সব দলকে তিনি আন্দোলনে চাইছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বন্ধুদের বলছি, সংবিধানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার করে বিদ্বেষমূলক কাজ করার চেষ্টা হচ্ছে। বিজেপি দেশের সব কিছু ঠিক করে দেবে, সেটা হতে দেওয়া যায় না।’’ সূত্রের খবর, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটি বৈঠক আয়োজনেও তৎপর হয়েছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফরের সময়ে রাজভবনে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করা যে সাংবিধানিক দায়িত্ব ছিল, তা মনে করিয়ে দিয়ে এ দিন মমতার প্রশ্ন— অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা কেউ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলে কেন কথা ওঠে না?
আরও পড়ুন: জনগণনা, এনপিআর এক নয়, বুঝেই সরে এসেছি: মমতা
পরে সভার বাইরে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী পাল্টা বলেন, ‘‘দিল্লিতে সরকারি বৈঠকে উনি যান না, রাজ্যের অফিসারদের যেতে বারণ করেন। যেখানে সকলের সামনে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করা যায়, সেখানে যান না। কিন্তু একান্তে সুযোগ পেলেই বৈঠকে যান। সেই জন্যই কথা ওঠে। আর মোদীভাই-দিদিভাই যে ওঁর মনে গেঁথে গিয়েছে, সেটা নিজেই বুঝিয়ে দিলেন!’’ কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তীরও মন্তব্য, ‘‘বাংলার মানুষ যা মনে করছেন, তারই প্রতিফলন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় বেরিয়ে এসেছে।’’
সিএএ-র জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে, এই মর্মে একটি সংশোধনী মনোজবাবুরা আনতে চাইলেও তা গৃহীত হয়নি। আলোচনায় বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘ঝড়-ঝাপ্টায় বড় গাছের ডাল ভাঙে। এখানে মুখ্যমন্ত্রীই সব চেয়ে বড় গাছ। তাঁকে কিছু বলব না তো কি সুব্রত মুখোপাধ্যায় বা শুভেন্দু অধিকারীকে বলব?’’ সুজনবাবু প্রশ্ন তোলেন, গত ৯ জানুয়ারি বিশেষ অধিবেশনে তাঁরা প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও তা মানা হয়নি আবার সামনে বাজেট অধিবেশন থাকা সত্ত্বেও এখন বিশেষ অধিবেশন ডেকে প্রস্তাব পাশ করতে হচ্ছে কেন? কেন্দ্রের পক্ষে বিজেপির স্বাধীনবাবু সওয়াল করেন, কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য সিএএ নয়।