প্রতীকী ছবি।
স্মার্টফোনের যুগে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের রমরমা বেড়েছিলই। কিন্তু লকডাউন পর্বে তা যেন আরও বেড়ে গিয়েছে। বাইরে থেকে খাবার আনানো হোক কিংবা টাকা-পয়সার লেনদেন, সবই এখন অ্যাপনির্ভর। এমনকি, সরকারের তরফেও অ্যাপের মাধ্যমেই যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তবে সাইবার বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অসাবধানবশতঃ অ্যাপ ব্যবহার করতে গিয়ে বিপদে পড়ার ঘটনাও কম নয়। অর্থাৎ যেন মুশকিল আসানের বেশেই ঢুকে পড়তে পারে বিপদের ঝক্কি! তার ফলে মোবাইল বা কম্পিউটার চলে যেতে পারে হ্যাকারদের কবলে।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, অহেতুক অ্যাপনির্ভরতাই বিপদ ডেকে আনতে পারে। যেমন করোনা পর্বে অনেকেই শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা মাপার জন্য অ্যাপ ব্যবহার করছিলেন। অথচ সত্যিই সেই অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা মাপা যায় কিনা, তা কেউ জানেন না। পুলিশের একাংশ মনে করছেন, ওই ধরনের অ্যাপ্লিকেশন আসলে সাইবারের দুষ্টচক্রের কাজ। ইতিমধ্যে সিআইডির সাইবার শাখার তরফে এই অ্যাপ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। কেউ কেউ আবার না-জেনে বিভিন্ন ওয়ালেটে ‘কেওয়াইসি’ তথ্য দিতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। এমন অনেকেই টাকা খুইয়েছেন।
সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, অ্যাপ্লিকেশনগুলি শুধু নাম, জন্মতারিখ এসবই নয়, আঙুলের ছাপের মতো বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করছে। সেই তথ্য কোথায় সঞ্চিত হচ্ছে তা কেউ জানে না। এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ বিপজ্জনক। তাঁর কথায়, ‘‘ইউরোপীয় দেশগুলিতে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যসুরক্ষা আইন রয়েছে। সেখানে তথ্যের সুরক্ষা নষ্ট হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে মোটা টাকা জরিমানা দিতে হয়। আমাদের দেশে এখনও তেমন আইন নেই।’’ প্রসঙ্গত, এই ধরনের তথ্য ফাঁসের অভিযোগ একাধিক বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার বিরুদ্ধে উঠেছে। ফেসবুক আগামী ১ অক্টোবর থেকে নতুন বিধি চালুও করতে চলেছে। সেখানে গ্রাহকের নিজস্ব না-জানানোর অধিকারও রয়েছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অ্যাপ ব্যবহারের সময় অজান্তেই গ্রাহক সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নিজের মোবাইল বা কম্পিউটারের দখল দিয়ে বসে। তার ফলে একেবারে হার্ডঅয়্যারের ভিতরে কোনও ভাইরাস বা গুপ্ত-সফটঅয়্যার বাসা গাড়তে পারে। সেখান থেকেই তথ্য ফাঁস হতে পারে। যা দিয়ে গ্রাহকের সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সব পাসওয়ার্ডও হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় দেখা গিয়েছে, জালিয়াতেরা ব্যাঙ্ক বা ওয়ালেট সংস্থার নাম করে বিভিন্ন লিঙ্ক পাঠাচ্ছে যার মাধ্যমে একটি সফটঅয়্যার ডাউনলোড হচ্ছে এবং সেই সফটঅয়্যারের মাধ্যমে দূরে বসেই গ্রাহকের মোবাইল এবং যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। বিভাসবাবুর মতে, ‘‘এই ধরনের বিপদ থেকে বাঁচতে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। নির্দিষ্ট কয়েকটি জিনিস মাথায় রাখলেই অনেক সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।’’