আদালতে নিয়ে আসা হচ্ছে বিধায়ক জীবনকৃষ্ণকে। নিজস্ব চিত্র।
চার দিনের সিবিআই হেফাজতে পাঠানো হল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাকে। আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হেফাজতে থাকবেন তিনি। বিধায়কের স্ত্রীকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিকেলে সিবিআই বিশেষ আদালতে পেশ করা হয় মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণকে। আদালতে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় সিবিআই। জীবনের আইনজীবী পাল্টা সওয়ালে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ‘ফাঁসানো’র অভিযোগ তোলেন এবং বিধায়কের জামিনের আর্জি জানান।
সিবিআই জীবনকে পাঁচ দিন নিজেদের হেফাজতে রাখতে চেয়ে জানায়, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলেন বিধায়ক। সিবিআইয়ের আরও অভিযোগ, উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) কারচুপির মাধ্যমে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চিত এবং অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন জীবন। তাঁকে হেফাজতে নিতে চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি জানান, জীবন যোগ্য প্রার্থীদের প্রতারিত করেছেন। তাঁর বাড়ি থেকে বহু নিয়োগ সংক্রান্ত নথি পাওয়া গিয়েছে। তাই তাঁকে সিবিআই হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন।
সোমবার সকালে কলকাতার সিবিআই দফতর, নিজাম প্যালেসে নিয়ে আসা হয় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণকে। গাড়ি থেকে নামতেই তাঁর দিকে প্রশ্ন ধেয়ে আসে, “পুকুরে ফোন ফেলে দিলেন কেন?” শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল সিবিআইয়ের তল্লাশি অভিযান। বিধায়কের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পরেই নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। নিজের দু’টি ফোন বাড়ির পিছনে থাকা পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেন জীবন। প্রায় ৬৪ ঘণ্টার নাটকীয়তার পর সোমবার ভোরে গ্রেফতার হন বিধায়ক। বিধায়কের ফোন ছুড়ে ফেলে দেওয়া নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ জীবন নিজাম প্যালেসে নামার পরেই সংবাদমাধ্যম এই বিষয়ে প্রশ্ন করে জীবনকে। বিধায়কের তরফে এই বিষয়ে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
সোমবার ভোর সওয়া ৫টা নাগাদ গ্রেফতার করা হয় তৃণমূল বিধায়ককে। তার পর নিজাম প্যালেসের উদ্দেশে জীবনকৃষ্ণকে নিয়ে রওনা দেন সিবিআই আধিকারিকেরা। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তদন্তে অসহযোগিতা এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা— মূলত এই দুই অভিযোগে প্রাথমিক ভাবে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বলে সিবিআই সূত্রে খবর। জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ আনে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় শুক্রবার বিকেলের দিকে অসুস্থতার কথা বলে শৌচালয়ে যাওয়ার নাম করে গিয়ে নিজের দু’টি মোবাইল বাড়ির পিছনের পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেন তিনি। ছোড়েন দু’টি পেনড্রাইভ এবং একটি হার্ডডিস্কও। সেগুলিরও খোঁজ চালানো হচ্ছিল। প্রায় ৩২ ঘণ্টা তল্লাশির পর একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়। সোমবার দুপুরে উদ্ধার হয় দ্বিতীয় ফোনটিও।