করিমপুরের বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশকে লাথি, কমিশনে বিজেপি

বেলা গড়াতে আক্রান্ত হলেন তিনি নিজেই। চড়-থাপ্পড় কষিয়ে, এক লাথি মেরে জয়প্রকাশকে ফেলে দেওয়া হল রাস্তার পাশের ঝোপে। প্রহৃত প্রার্থী পরে বললেন, ‘‘মার খেয়ে আমার মনোবল বেড়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

সুস্মিত হালদার ও কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৩২
Share:

করিমপুরের বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে পদাঘাত। ইনসেটে অভিযুক্ত। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

গোলমাল হতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিলই। কিন্তু যা ঘটল, তা অপ্রত্যাশিত।

Advertisement

সোমবার সকাল থেকেই বারবার বিভিন্ন বুথে গিয়ে গোলমালে জড়িয়ে পড়ছিলেন নদিয়ার করিমপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার। কখনও আধাসেনা তাঁকে বুথ থেকে বার করে দিয়েছে, কখনও তাঁকে ‘গো-ব্যাক’ ধ্বনি দিতে গিয়ে পুলিশের লাঠি খেয়েছে তৃণমূলের লোকজন।

বেলা গড়াতে আক্রান্ত হলেন তিনি নিজেই। চড়-থাপ্পড় কষিয়ে, এক লাথি মেরে জয়প্রকাশকে ফেলে দেওয়া হল রাস্তার পাশের ঝোপে। প্রহৃত প্রার্থী পরে বললেন, ‘‘মার খেয়ে আমার মনোবল বেড়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘিয়াঘাট ইসলামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ ও ৩৩ নম্বর বুথের কাছে রাস্তায় এলাকার কিছু লোকজনের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন জয়প্রকাশ। এর পরেই কয়েক জন হঠাৎ তাঁর উপরে চড়াও হন। তাঁর মাথায়, ঘাড়ে ধাক্কা দেওয়া হয়। তিনি রাস্তার পাশে হুমড়ি খেলে এক জন লাথি মেরে তাঁকে ঝোপে ফেলে দেয়।

জয়প্রকাশ শুধু এই উপনির্বাচনের প্রার্থী নন, তিনি বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতিও। তাঁর লাঞ্ছনায় ক্ষুব্ধ বিজেপি নেতৃত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছে ন’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাদের দাবি, প্রার্থীকে লাথি মারায় অভিযুক্ত তারেকুল শেখ-সহ সকলেই স্থানীয় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। তারেকুল চাষবাস করেন, বাকিরাও এলাকারই লোক। তবে যে কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছিল, সেখানে এই ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পরে কৃষ্ণনগরে পথ অবরোধ করে কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপারের পদত্যাগও দাবি করেছে বিজেপি।

বিকেলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানানো হয়, এক জনকে আটক করা হয়েছে। রাতে কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপার জাফর আজমল কিদোয়াই বলেন, ‘‘কিছু লোককে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা এক জনকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করেছি। তার নাম আমারুল শেখ।’’ যদিও বিজেপি যে ন’জনের নাম দিয়েছে, তাদের মধ্যে এ রকম কেউ নেই।

দিনটা শুরুই হয়েছিল দুই বিজেপি এজেন্ট অপহরণের অভিযোগ দিয়ে (যদিও পরে জানা যায়, তাঁরা অপহৃত হননি)। সকাল সওয়া ৭টা নাগাদ ওই খবর পেয়ে থানারপাড়ার পণ্ডিতপুরে ৩৯ নম্বর বুথে যান জয়প্রকাশ। কিন্তু বুথে ঢুকতে গেলে আধাসেনা তাঁকে বার করে দেয়। পরে ধোড়াদহে তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেন তৃণমূল কর্মীরা। পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাঁদের হটিয়ে দেয়।

আরও পড়ুন: ঘরবন্দি থেকেই খড়গপুরে ঘর আগলালেন দিলীপ ঘোষ

বড় গোলমাল বাধে বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘিয়াঘাট ইসলামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ ও ৩৩ নম্বর বুথে। বুথের পাশেই স্কুলের রান্নাঘরে কয়েক জনকে দেখে জয়প্রকাশ গিয়ে জানতে চান, তাঁরা সেখানে কী করছেন। তাঁরা দাবি করেন, ১০ জন ভোটকর্মীর জন্য রান্না করছেন। জয়প্রকাশ জানতে চান, ১০ জনের জন্য আট জন রান্না করছেন? তা-ও বুথ চত্বরে? তর্কাতর্কি শুরু হতেই বেগতিক বুঝে জনা তিন সরে পড়েন। ৩২ নম্বর বুথের প্রিসাইডিং অফিসার জানান, তাঁরা কাউকে রান্নার বরাত দেননি। এর পরে বুথ থেকে বেরিয়ে এসেই জয়প্রকাশ আক্রান্ত হন।

ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে একটু থতমত খেয়ে গেলেও প্রার্থীকে ঝোপে উল্টে পড়তে দেখে খানিক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আধাসেনা লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে আসে। পরে কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন তেহট্ট মহকুমাশাসক অনীশ দাশগুপ্ত এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃশানু রায়। জয়প্রকাশের অভিযোগ, ‘‘হার নিশ্চিত বুঝে তৃণমূল মরিয়া হয়ে গিয়ে আমার উপরে চড়াও হয়েছে। কারণ, ওরা জানে যে আমি এখানে থাকলে বুথ দখল করতে পারবে না। ছাপ্পা দিতে পারবে না।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও দাবি করেন, ‘‘ভয় পেয়েই ওরা এই কাজ করেছে। তবে এতে কিছু লাভ হবে না।’’

জয়প্রকাশের আরও অভিযোগ, করিমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক, বর্তমানে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র এই হামলার পিছনে আছেন। চেষ্টা করেও মহুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তৃণমূলের নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা দাবি করেন, ‘‘বিজেপি প্রার্থী সকাল থেকেই উত্তেজনা তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। আমার ধারণা, তাতেই খেপে গিয়ে এলাকার মানুষ এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। আবার ওঁরা নিজেদের লোক জুটিয়েও উনি এটা ঘটাতে পারেন।’’ আর, তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের টিপ্পনী, ‘‘কেউ ওঁকে মারেনি। উনি হাঁটতে জানেন না, তাই পড়ে গিয়েছেন।’’ নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, নদিয়া থেকে জেলাশাসক ও কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপারের রিপোর্ট জমা পড়েছে। পুলিশ জেলা সুপারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসন জয়প্রকাশকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী নিতে বলেছিল। তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। জয়প্রকাশ বলেন, ‘‘পরশু এক কনস্টেবলকে আমার কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন যেখানে দাবি করে এসেছে, করিমপুরে অশান্তির পরিবেশ নেই, আমারই বা রক্ষী লাগবে কেন— এই প্রশ্ন তুলে আমি তাঁকে ফেরত পাঠাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement