চিঠির এই অংশ (চিহ্নিত) ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র
অভিযোগের চিঠি তো কতই আসে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনে। কিন্তু এমন চিঠি সাম্প্রতিক সময়ে আসেনি। চিঠি লেখা হয়েছে সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যানকে। কিন্তু চিঠির উপরে ‘দিদিকে বলো’ লেখা স্টিকার সাঁটা। চিঠির উপরের ডান দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ছবি। ছবির চার দিকেই ‘দিদিকে বলো’ লেখা। রয়েছে ‘দিদিকে বলো’-র ফোন নম্বরও।
বিধবা ভাতা না পেয়ে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার বাসিন্দা সাহিদা বিবি দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম পঞ্চায়েত, দেগঙ্গা ব্লকের বিডিও থেকে শুরু করে জেলাশাসকের দফতরে একাধিক বার দরবার করেছেন। অভিযোগ, কোথাও তাঁর সমস্যার সুরাহা হয়নি। সাহিদার স্বামী বছর কয়েক আগে মারা গিয়েছেন। প্রবীণ ওই মহিলা বাধ্য হয়ে মাস কয়েক আগে কিড স্ট্রিটে খাদ্য ভবনে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের দফতরে চিঠি লেখেন। কমিশন সূত্রের খবর, শুধু সাহিদার চিঠিই নয়, ‘দিদিকে বলো’-র স্টিকার সাঁটা আরও কয়েকটি চিঠি কমিশনের কাছে এসেছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান আবু আয়েশ মণ্ডল বলেন, ‘‘অভিযোগকারীরা চিঠির গুরুত্ব বোঝাতে হয়তো ‘দিদিকে বলো’ নাম ও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করছেন।’’ সূত্রের খবর, কমিশন অবশ্য ওই সব চিঠি ‘দিদিকে বলো’-র দফতরে না পাঠিয়ে নিজেই চিঠিতে লেখা অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে দেখছে।
অবশ্য তৃণমূল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি-সহ ‘দিদিকে বলো’ নামাঙ্কিত স্টিকার অভিযোগকারীরা চিঠিতে ব্যবহার করলেও ওই ধরনের প্যাডের কোনও বৈধতা নেই। ‘দিদিকে বলো’র স্টিকার ছাপিয়ে সেই কাগজে সংখ্যালঘু কমিশনে চিঠি লিখেছেন অভিযোগকারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিশনের এক সদস্যের কথায়, ‘‘সবই তো বোঝেন, এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীই শেষ কথা। তাই অভিযোগকারীরা তাঁর ছবি ও নাম ব্যবহার করে কমিশনকে চিঠি লিখছেন।’’
‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি রূপায়িত হওয়ার পরে সাধারণ মানুষ সেখানে ফোন করে নানা ভাবে উপকৃত হচ্ছেন। তবে সংখ্যালঘু কমিশনের মতো অফিসে ‘দিদিকে বলো’ স্টিকার সাঁটা চিঠি এখন চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক কর্মীর কথায়, ‘‘আগে এই ধরনের চিঠি কখনও আমাদের কাছে আসেনি। প্রথমে ওই চিঠি পেয়ে আমরা অবাক হয়ে যাই। কী করব বুঝতে না পেয়ে কমিশনের আধিকারিকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। চিঠিটি ‘দিদিকে বলো’র দফতরে পাঠানোর কথা ভাবা হয়েছিল প্রথমে। এখন বিষয়টি আমরাই গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’’ এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্য সচিব সাকিল আহমেদকে ফোন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
অভিযোগকারী সাহিদা বিবির কথায়, ‘‘সামান্য বিধবা ভাতার টাকা পেতে একাধিক সরকারি দফতরে দরবার করেছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। তাই শেষ ভরসা হিসেবে দিদির প্রতি আস্থা রেখে কমিশনের লেখা চিঠিতে ‘দিদিকে বলো’ স্টিকার ছাপিয়েছি। এতে আমার কোনও দোষ দেখছি না।’’ চেয়ারম্যানের কথায়, ‘‘কমিশন অভিযোগ পেয়ে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে সুপারিশ করতে পারে মাত্র। নীতি বাস্তবায়নের ক্ষমতা কমিশনের হাতে নেই। তবুও আমরা প্রতিটি অভিযোগ যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’’