প্রতীকী ছবি।
নাচ জানে না সে। তবু যে-সব পাচারকারীরা তাকে জোর করে আটকে রেখেছিল, তাদের পছন্দের পোশাক পরে হিন্দি গানের সঙ্গে তাকে টানা তিন-চার ঘণ্টা নাচতে হত বিভিন্ন জলসায়। না-নাচলে সমানে ভয় দেখানো হত। এই ধরনের জলসা থেকে, অত্যাচার থেকে কোনও মতেই পালাতে না-পেরে নিজের হাতের শিরা কেটে, এমনকি গলায় ব্লেড চালিয়ে নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করেছিল সে। বিহারের সিওয়ান থেকে ফিরে আসা ষোড়শীর এই সব অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে হাড়োয়া থানা।
ওই কিশোরীর পরিবার জানিয়েছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেয়ে আর ফিরে আসেনি। আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করেও না-পেয়ে তাঁরা যখন দিশাহারা, একটি মোবাইল নম্বর থেকে ভিডিয়ো কল আসে মেয়েটির দাদার নম্বরে। ফোনে এক অচেনা যুবক জানায়, তাঁদের মেয়েকে সে বিয়ে করেছে। তাই মেয়ের যেন আর খোঁজ করা না-হয়। চার-পাঁচ দিন পরে মেয়েকে নিয়ে সে বাড়ি আসবে বলে আশ্বাস দেয় ওই যুবক। কিশোরীর মা বলেন, ‘‘ভিডিয়ো কলে মেয়েকে দেখানো হয়। কিন্তু পিছনের আসনে বসেছিল সে। নচাচড়া করছিল না। ঘুমোচ্ছিল বলে মনে হয়।’’
মেয়েকে ভিডিয়ো কলে এই অবস্থায় দেখেই আত্মীয়স্বজন হাজির হন হাড়োয়া থানায়। কিন্তু তার পরেও মেয়ের কোনও খোঁজ পাননি তাঁরা। শেষে এক দিন অচেনা নম্বর থেকে ওই কিশোরীই ফোন করে জানায়, তাকে সিওয়ান বলে একটি জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে। ওই মোবাইল নম্বর নিয়ে থানায় হাজির হয় কিশোরীর পরিবার। কিশোরীর মা জানান, থানার অফিসার ওই নম্বরে ফোন করে নিজের পরিচয় দিয়ে জানতে চান, মেয়েটিকে কোথায় রাখা হয়েছে। পুলিশের ফোন পেয়ে অন্য প্রান্ত ফোন কেটে দেয়।
এক মহিলা ১৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ির লোকেদের ফোন করে জানায়, তাদের মেয়েকে হাড়োয়া স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হবে। সে-দিনই মেয়েটিকে হাড়োয়া স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে পাচারকারী এক মহিলা পালিয়ে যায়। ওই কিশোরী বলে, ‘‘আমাকে ওরা বলেছিল, ‘তোরা তো চার বোন। তোদের বাড়ি যে পুলিশে খবর দেবে, সেটা ভাবিনি!’’ কিশোরী জানায়, সে সিওয়ানের যেখানে ছিল, তার বয়সি আরও বাঙালি মেয়ে আছে সেখানে।