(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইন্দ্রনীল সেন (ডান দিকে) —ফাইল চিত্র।
একদা বিরোধী ইন্দ্রনীল সেনের গান শুনতে যেতেন তিনি। সোমবার আলিপুরের মুক্তমঞ্চ উত্তীর্ণতে আয়োজিত ভবানীপুর বিধানসভায় বিজয় সম্মিলনীতে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন অনুরোধের আসর শুনতাম, পালা করে। তাই গোল্ডেন পিরিয়ডের সব গান আমাদের কণ্ঠস্থ। আমাদের এখনও মুখস্থ। তারপরে দেখেছিলাম ইন্দ্রনীল সেনকে। দূরের বলাকা ক্যাসেট ওঁর খুব পপুলার ছিল। তখন ওরা আমাদের বিরুদ্ধে থাকলেও, তখন ইন্দ্রনীল হাজরায় গান গাইতে আসত। আমি কিন্তু মন দিয়ে প্রতিবার শুনতে যেতাম।’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘অনুপের বন্ধু ছিল। সেই সুবাদেই ও গান গাইতে আসত। অনুপ চ্যাটার্জি অনুষ্ঠানগুলো করত। আজ অনুপ নেই।’’
উল্লেখ্য, ৯০-এর দশকে বাংলার গানের আসরে ইন্দ্রনীল সেনের আবির্ভাব। সেই সময় থেকেই বামমনস্ক ইন্দ্রনীল সিপিএম নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এমনকি বামেদের সমর্থন জানিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতিও দিতেন মমতার দলের বিরুদ্ধেই। কিন্তু ২০১১ সালের রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর তৃণমূলের যোগদান করেন গায়ক ইন্দ্রনীল। ২০১৪ সালে বহরমপুর লোকসভা অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ভোটে পরাজিত হন। কিন্তু ২০১৬ সালে চন্দননগর বিধানসভা থেকে ইন্দ্রনীলকে বিধায়ক হিসেবে জিতিয়ে এনে মন্ত্রিসভায় জায়গা দিয়েছেন মমতা। ২০২১ সালেও চন্দননগর থেকে জিতে ফের মন্ত্রিসভায় বড় দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। সেই সতীর্থের সঙ্গে তাঁর স্মৃতি ভাগ করে নিয়েছেন মমতা। বিজয়া সম্মিলনী শেষে রাজ্যের সঙ্গীত ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য মাইক্রোফোন ইন্দ্রনীলের হাতেই তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
গান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘কখনও কখনও শোনা যায় সেই যে গানের স্বর্ণযুগ চলে গেল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নেই, নেই মান্না দে, শ্যামল মিত্র, কিশোর কুমার, মহম্মদ রফি। বাংলা গান আজকাল খুব ভাল গাইছে রূপঙ্কর বাগচী, মনোময়, শ্রীরাধা, লোপামুদ্রা। এই যে যাঁরা নতুন জেনারেশেনের এসেছেন, তারাও খুব ভাল গাইছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী কথায়, ‘‘আমাদের অরিজিৎ ভাল গায়, শান, কুমার শানু অভিজিৎ ভাল গায়। কবীর সুমন তো এমন একজন গায়ক যে নতুন করে শুরু করেছিল। আজও বাংলা খেয়াল রেগুলার গায়। আর আমাকে একটা করে পাঠায়। তিনি আরও বলেন, ‘‘নচিকেতার গানেরও একটা বাজার আছে। বিশেষ করে ওর বৃদ্ধাশ্রম গানটা সকলের মন কেড়েছে, নচিও গায়। তা ছাড়া সৌমিত্র, সুরজিৎ, জয়তীরাও আছে। সবাই ভাল করছে।’’
স্বর্ণযুগের গানের কথা উল্লেখ করে শ্যামল মিত্র, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীদের নাম করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায়ই আমার ফোনে কথা হত। আমাকে বলতেন, দু লাইন গান শোনাও, আমি বলতাম আমি আবার কবে গান শিখলাম। আমি কী করে গাইব? বলত তুমি খুব সুরে গান গাও। গান শোনাও, নাহলে ফোন ছাড়ছি না। একদিন ফোন ছাড়ছেন না দেখে আমাকে গান শোনাতে হয়েছিল।’’ প্রয়াত গায়ক দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় তাঁকে গানের ক্যাসেট বার করারও পরামর্শও দিয়েছিলেন বলে জানান মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রয়াত গায়িকা লতা মঙ্গেশকর তাঁকে মা কালীর ছবি দিয়ে একটা হার পাঠিয়েছিলেন বলেও জানান মমতা। তিনি সযত্নে সেই হারটি রেখে দিয়েছেন বলেও জানান।