স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে পরিযায়ী শ্রমিকদের চিকিৎসা সুযোগ খাতে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। —ফাইল চিত্র।
স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে এ বার পরিযায়ী শ্রমিকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বৃহস্পতিবার ২০২৪-’২৫ অর্থবর্ষের বাজেটে সেই প্রস্তাব রাখলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তবে, এর জন্য ভিন রাজ্যে কর্মরত বঙ্গের শ্রমিকদের ‘কর্মসাথী পরিযায়ী শ্রমিক পোর্টাল’-এ নাম নথিভুক্ত থাকতে হবে। মন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে জানিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিকেরা তাঁদের কর্মস্থলের হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বিমার মাধ্যমে চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ বিমা সংস্থার মাধ্যমে ‘ইনশিয়োরেন্স মোড’-এ পরিষেবা মিলবে বলেই মনে করছে স্বাস্থ্যমহল।
রাজ্যে প্রথম যখন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প শুরু হয়েছিল, তখন সেটিও ‘ইনশিয়োরেন্স মোড’-এ ছিল। সেই সময় বেসরকারি হাসপাতালের তরফে যে চিকিৎসা বিল পাঠানো হত, তা বিমা সংস্থা পরীক্ষা করে টাকা দিত। স্বাস্থ্য দফতর থেকে টাকা পেত ওই সংস্থা। কিন্তু ক্রমশ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গেই, সময়ে বিল না পাওয়ার অভিযোগ তুলতে শুরু করে বেসরকারি হাসপাতালগুলি। তাতে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ধাক্কা খাওয়ায় রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প ‘অ্যাশিয়োরেন্স মোড’-এ করা হয়েছে। অর্থাৎ বেসরকারি হাসপাতালের পাঠানো বিল সরাসরি দেয় স্বাস্থ্য দফতর। যদিও আয়ুষ্মান ভারতের ক্ষেত্রে কোনও কোনও রাজ্য ‘ইনশিয়োরেন্স মোড’ চালু রেখেছে। কেউ আবার ‘অ্যাশিয়োরেন্স মোড’-এ চালাচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী এ দিন জানান, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে পরিযায়ী শ্রমিকদের চিকিৎসা সুযোগ খাতে ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নতুন এই প্রকল্পে ২৮ লক্ষের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক উপকৃত হবেন। সূত্রের খবর, প্রায় ৪০ লক্ষ শ্রমিক ভিন রাজ্যে কর্মরত। কিন্তু সকলের নাম ‘কর্মসাথী পরিযায়ী শ্রমিক পোর্টাল’-এ নথিভুক্ত নেই। সরকারের কাছে নথিভুক্ত থাকা শ্রমিকেরাই গুরুতর চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভিন রাজ্যে ওই সুযোগ পাবেন। এর জন্য রাজ্য শ্রম দফতরের তরফে আধার নম্বর, কর্মস্থল ও বাসস্থানের ঠিকানা সহ উপভোক্তাদের তালিকা দেওয়া হবে স্বাস্থ্য দফতরকে।
হিসেব বলছে, বাজেটে পরিযায়ী শ্রমিকদের চিকিৎসা খাতে যে মোট টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তা ২৮ লক্ষের হিসেবে মাথাপিছু বার্ষিক প্রিমিয়াম দাঁড়াচ্ছে ৫৩৬ টাকা। এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, ‘‘কম টাকাতেও যে ভাল কিছু করা যায় সেটি বাজেটে প্রস্তাবিত এই প্রকল্পই প্রমাণ।’’ যদিও বিরোধীদের দাবি, মাথা পিছু এত কম প্রিমিয়ামে আদৌ ভিন রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে চিকিৎসার সুযোগ কতটা মিলবে তাতে সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া, ভিন রাজ্যে থাকা বাকি প্রায় ১২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক তো পোর্টালে এরপর নাম লেখাতেই পারেন। তখন তো বরাদ্দ রাতারাতি অনেকটাই বাড়াতে হবে। প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, ‘‘টাকার পরিমাণ কোনও সমস্যা হবে না। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন মতো বরাদ্দ বৃদ্ধিও করার সুযোগ রয়েছে।’’
ইতিমধ্যে রাজ্যের ২ কোটি ৪৫ লক্ষ পরিবার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তালিকাভুক্ত রয়েছে ২ হাজার ৭৪৯টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম। শুরুর সময় অর্থাৎ ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ লক্ষ উপভোক্তা পরিষেবা পেয়েছেন। যার জন্য মোট ৮,৬০০ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। গত অর্থবর্ষের বাজেটে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ২,৫১০ কোটি টাকা। এ বার সেটি বেড়ে হয়েছে ২,৭৬৫ কোটি টাকা। তার মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের খাতে বরাদ্দ ১৫০ কোটি রয়েছে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।
অন্য দিকে, গত অর্থবর্ষে বাজেটে স্বাস্থ্য দফতরের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ১৮২৬৪.৬২ কোটি টাকা। এ বার সেটি বেড়ে হয়েছে ১৯,৮৫১.৭৩ কোটি।
পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ভিন রাজ্যে অসুস্থ হলেও অনেকেই যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারেন না অর্থের অভাবে। সেখানে এই প্রকল্পের আওতায় এলে অনেক সুবিধা হবে।’’ তবে, বাজেটে তাঁদের জন্য কোনও বরাদ্দ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ আশা কর্মী সংগঠন। রাজ্য সম্পাদক ইসমত আরা খাতুন বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে মাঠেঘাটে নেমে আশাকর্মীরা কাজ করেন। অন্যান্য কাজেও তাঁদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আশাকর্মীদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করে কিছুটা আর্থিক সচ্ছলতা দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকার ভাবল না। প্রায় ৭০ হাজার আশা কর্মী এই বাজেটে আশাহত।’’