Coronavirus in Kolkata

বিদেশ থেকে মহানগরে পা দিয়েই নিভৃতবাস এড়িয়ে সরাসরি বাড়িতে!

যাত্রার সময় ফর্ম পূরণ করে তাঁরা কলকাতায় নেমে নির্দিষ্ট হোটেলে নিজেদের খরচে সাত দিন নিভৃতবাসে থাকার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ ০৪:০৫
Share:

পিটিআই-এর প্রতীকী ছবি।

বিদেশ থেকে মহানগরে পা দিয়েই সাত দিন নিভৃতবাসে থাকার কথা। অথচ সেই সরকারি নিয়ম ও শর্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিদেশ থেকে কলকাতায় নামার পরে একের পর এক যাত্রী সটান বাড়ি চলে যাচ্ছেন! অসহায় ভাবে সেটা দেখা ছাড়া কিছু করার থাকছে না রাজ্য সরকারের।

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই বিষয়ে চিঠি দিয়ে সতর্কও করেছে রাজ্যকে। কিন্তু ছবিটা বদলায়নি। করোনা পর্বের নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ‘বন্দে ভারত’ প্রকল্পে যাঁরা উড়ানে বিদেশ থেকে কলকাতায় আসছেন, তাঁদের সাত দিন গাঁটের কড়ি খরচ করে শহরের নির্দিষ্ট কিছু হোটেলে নিভৃতবাসে থাকা আবশ্যিক। এই শর্তে রাজি হলে তবেই তাঁদের উড়িয়ে আনা হচ্ছে। সাত দিন পরে বাড়িতে ফিরে আরও সাত দিন গৃহ-নিভৃতবাসে থাকার কথা তাঁদের।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় কুয়ালা লামপুর থেকে বন্দে ভারত প্রকল্পে ইন্ডিগোর উড়ানে কলকাতায় নামেন ১৬৮ জন যাত্রী। তাঁদের বেশির ভাগই শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, যাত্রার সময় ফর্ম পূরণ করে তাঁরা কলকাতায় নেমে নির্দিষ্ট হোটেলে নিজেদের খরচে সাত দিন নিভৃতবাসে থাকার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কলকাতায় নেমে রুদ্রমূর্তি ধরেন। জানান, টাকা নেই। তাই হোটেলে থাকা সম্ভব নয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: বঙ্গে তৈরি করোনা কিটে সায় আইসিএমআরের

বিমানবন্দরের খবর, ওই সব যাত্রীকে নিভৃতবাসে পাঠানোর দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের প্রতিনিধিরা। তাঁদের সাহায্য করছে পুলিশ। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে টানাপড়েন চলে রাত ২টো পর্যন্ত। অভিযোগ, এই দীর্ঘ সময়ে ওই ১৬৮ জন যাত্রী জল ও খাবার না-পেয়ে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। হোটেলে থাকতে না-চাওয়ায় তাঁদের সরকারি নিভৃতবাসে পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই প্রস্তাবও খারিজ করে দেন যাত্রীরা। শেষে রাত প্রায় আড়াইটে নাগাদ ১৬৮ জনের মধ্যে মাত্র ২৮ জনকে হোটেলে পাঠানো সম্ভব হয়। বাকি ১৪০ জন নিজের নিজের বাড়িতে চলে যান।

এর আগে, ১৯ জুন কিরঘিজস্তান থেকে আসা ১৪৩ জন যাত্রীও হোটেলে যেতে আপত্তি করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ডাক্তারি পড়ুয়া। তাঁদেরও বক্তব্য ছিল, হোটেলে থাকার টাকা নেই। বিমানবন্দরের এক আধিকারিক জানান, সে-দিন ১৪৩ জনই জোর করে বাড়ি ফিরে যান। তাঁদের নিতে যে-ধরনের বিলাসবহুল গাড়ি বিমানবন্দরের বাইরে হাজির ছিল, সেগুলো দেখলে এটা মেনে নেওয়া মুশকিল যে, হোটেলের টাকা দিতে তাঁরা অক্ষম। ওঁদের অনেকেরই বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় ঝড়ে চিনা অস্ত্র গণ-পরীক্ষাই

ঘটনাচক্রে ওই ১৯ জুনই কেন্দ্রের চিঠি আসে রাজ্যের কাছে। তাতে বলা হয়, ৪, ৮ এবং ১০ জুন বিদেশ থেকে বন্দে ভারত উড়ানে কলকাতায় নামার পরে বেশ কিছু যাত্রী নিয়মের তোয়াক্কা না-করে বাড়িতে চলে গিয়েছেন।

এ ভাবে নিয়মবিধি ও শর্ত ভাঙতে দেওয়া হচ্ছে কেন?

রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, বিদেশফেরত যাত্রীরা নামার পরে তাঁদের শরীরে সংক্রমণ রয়েছে কি না, মূলত সেটাই দেখছেন তাঁরা। নিভৃতবাসে পাঠানোর দায়িত্বে রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর এবং পুলিশ। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, তাঁদের যেমন নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, তেমনটাই করছেন তাঁরা। মঙ্গলবার ওই বিপুল সংখ্যক যাত্রী হোটেলে নিভৃতবাসে যেতে না-চাইলে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষে ওই যাত্রীদের থানায় নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখা সম্ভব নয়। এমনটা করার কোনও সংস্থানও নেই আইনে।

তবে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, যাঁরা এ ভাবে নিয়মবিধি না-মেনে জোর করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement