হাসপাতালে সৃষ্টিধর প্রামাণিক।—নিজস্ব চিত্র।
মাঝরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এক সিপিএম কর্মীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুক্রবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি থানার কেঁন্দুয়া গ্রামে। লোহার রড ও বন্দুকের বাঁটের ঘায়ে গুরুতর জখম হন সৃষ্টিধর প্রামাণিক নামে ওই সিপিএম কর্মী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর মাথার চোট গুরুতর।
এই ঘটনায় তিন তৃণমূল কর্মী-সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে জামবনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সৃষ্টিধরবাবুর স্ত্রী আরতি প্রামাণিক। তবে কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে।
হঠাৎ কেন সৃষ্টিধরবাবুর উপর হামলা? স্থানীয় সূত্রের খবর, মাওবাদী সন্ত্রাস পর্বে এলাকা ছেড়েছিলেন সিপিএমের জামবনি শাখা কমিটির সদস্য বছর পঞ্চাশের সৃষ্টিধরবাবু। রাজ্যে পালাবদলের পরে এলাকায় ফিরলেও সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন তিনি। তবে গত বছর দলীয় সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করান। সম্প্রতি সক্রিয় ভাবে দলীয় কাজ করছিলেন। তাঁকে তৃণমূলের লোকজন দল ছাড়ার হুমকি দিলেও লাভ হয়নি। সিপিএমের জামবনি জোনাল কমিটির সম্পাদিকা হেনা শতপথীর অভিযোগ, “সৃষ্টিধরবাবু আমাদের দীর্ঘদিনের কর্মী। উনি এলাকায় দলীয় সংগঠনের কাজকর্ম করছিলেন বলে তৃণমূলের লোকেরা পরিকল্পিতভাবে তাঁকে খুন চেষ্টা করে।” শনিবার হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে সৃষ্টিধরবাবুও বলেন, “গ্রামে আমি একাই সিপিএম করি। নিয়মিত জামবনি লোকাল কমিটির অফিসে যাতায়াত করছিলাম। কিছুদিন আগে তৃণমূলের লোকেরা হুমকি দিয়ে পার্টির কাজ করতে নিষেধ করেছিল।” প্রবীণ ওই সিপিএম কর্মী আরও জানান, শুক্রবার রাতে মারধরের সময় হামলাকারীরা বলছিল, ‘খুব পার্টিবাজি করছিস। এমন মারব আর জীবনে জামবনি পার্টি অফিসে যেতে পারবি না।’ তৃণমূলের জামবনি ব্লক কার্যকরী সভাপতি সমীর দণ্ডপাটের বক্তব্য, “এমন ঘটনা বরদাস্ত করা যায় না। দলের লোক হলেও অভিযুক্তদের আড়াল করার প্রশ্ন নেই। তবে দলের তরফে সৃষ্টিধরবাবুকে হুমকি দেওয়া হয়নি।” সৃষ্টিধরবাবুর স্ত্রী আরতিদেবী জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ মাটির বাড়ির দরজা ভেঙে সশস্ত্র পাঁচ জন ঘরে ঢোকে। দলে তিন তৃণমূল কর্মী শান্তনু মাহাতো, কবি মাহাতো ও বনবিহারী মাহাতো ছিলেন। অভিযোগ, ওই পাঁচ জন বাড়িতে ঢুকে প্রথমে ভাঙচুর চালায়। তারপর বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে সৃষ্টিধরবাবুকে টেনে নিয়ে যায় তারা। তারপর রাস্তায় ফেলে বন্দুকের বাঁট, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে চলে বেধড়ক মারধর। সৃষ্টিধরবাবুর মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। তারপর কোনওক্রমে পালিয়ে পাশের জঙ্গলে লুকিয়ে পড়েন তিনি। পরে পরিজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।