বছর শুরুর আনন্দ অনেকটাই ম্লান করে দিল বৃষ্টি!
বছরের শেষ দিন বুধবার থেকেই দফায় দফায় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। নতুন বছরের প্রথম দিন বৃহস্পতিবারও দিঘা, হলদিয়া ও মহিষাদলের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় হাল্কা বৃষ্টি হল। বৃহস্পতিবার হলদিয়ার ক্ষুদিরামনগর থেকে শুরু করে থার্টিন মোড়ে বৃষ্টির মধ্যেই নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ দিন হলদিয়ার বিভিন্ন শিল্প সংস্থার সংগঠনের ব্যানারেও বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয়। যদিও বৃষ্টির কারণে পিকনিক স্পটগুলিতে ভিড় কিছুটা কমই ছিল। হলদিয়ার বালুঘাটার পিকনিক স্পট বা হলদিয়ায় হুগলি নদীর ধারে বিভিন্ন জায়গায় হাতে গোনা কিছু লোককে পিকনিক করতে দেখা গিয়েছে।
২৫ ডিসেম্বর বালুঘাটায় সানসেট ভিউ পয়েন্টে পিকনিক করতে বহু মানুরে ঢল নেমেছিল। যদিও এ দিন বৃষ্টির জেরে অনেক কম লোকই সেখানে পিকনিক করতে আসে। বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে এ দিন অনেককে ত্রিপল খাটিয়েও পিকনিক করতে দেখা গিয়েছে। সানসেট ভিউ পয়েন্ট এলাকার এক স্টেশনারি ও মুদি ব্যবসায়ী শম্ভু মাল বলেন, “২৫ ডিসেম্বর থেকে এখানে অনেক পিকনিক পার্টি আসছিল। আশা করেছিলাম, বৃহস্পতিবার ভাল ভিড় হবে। কিন্তু গতকাল থেকে হলদিয়ায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হ এ দিন অনেক কম লোক পিকনিক করতে এসেছেন।” সানসেট ভিউ পয়েন্টে আইসক্রিম বিক্রি করেন কুশধ্বজ পাত্র। তিনি জানালেন, বছরের প্রথম দিনে ভালো পিকনিক পার্টি আসবে বলে এই আশায় ছিলাম। কিন্তু এ বার বৃষ্টির কারণে অনেক কম লোক এসেছে।”
অন্য দিকে, এগরাতেও বৃষ্টির জেরে বর্ষবরণের অনেক অনুষ্ঠানে কাটছাঁট করতে হয়। এগরা শহরের নবরূপ ক্লাবের সদস্য মিন্টু দাস, সুদীপ রায়েরা বলেন, “বছরের প্রথমদিনে অনেক পরিকল্পনা থাকে। পিকনিক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়। কিন্তু এ বছর বৃষ্টির কারণে সব কিছু বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বৃষ্টিতে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানও ব্যাহত হয়। পটাশপুরের তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মৃণাল দাস বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হয়েছে। তবে এটা ঠিক, বৃষ্টির কারণে অনেক অনুষ্ঠান বিঘ্নিত হয়েছে।” ভগবানপুরের তৃণমূল নেতা স্বপন রায় বলেন, “বৃষ্টির জন্য অন্য বছরের তুলনায় প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানের আড়ম্বর কম ছিল।”
নতুন বছরের প্রথম দিনটি সৈকতশহর দিঘায় কাটাতে গিয়ে হতাশ হলেন অনেকেই। মেঘলা আকাশে দেখা মিলল না সূর্যের। ফলে এ যাত্রায় বাদ থেকে গেল দিঘা-মন্দারমণির সাইসেট-সানরাইজ। হুল্লোরে বৃষ্টি বাদ সাধায় কিছুটা হতাশ পর্যটকেরাও। ঘরবন্দি হয়ে দিন কাটালেন অনেকেই। দুর্গাপুর থেকে সপরিবার দিঘায় বেড়াতে এসেছিলেন মনোতোষ হালদার। তাঁর কথায়, “নতুন বছরে দিঘায় ছুটি কাটাতে এসেছিলাম। কিন্তু দফায় দফায় বৃষ্টির জেরে সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল।” একইভাবে, খড়্গপুরের অভিষেক বসু, বিষ্ণুপুরের স্মৃতি ভৌমিক বলেন, “নতুন বছরের শুরুতে বৃষ্টির জেরে অনেক পরিকল্পনাই ভেস্তে গেল। তবু তারই মাঝে আনন্দ করছি।”
নতুন বছরের প্রথম দিনে মেদিনীপুরেও আনন্দে মাতেন আট থেকে আশি। বিভিন্ন ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরাঁয় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। রাত ১২টা বাজতেই নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে নানা জায়গায় আতসবাজি জ্বালানো হয়। অনেকেই গভীর রাত পর্যন্ত চুটিয়ে আনন্দ করেন। বর্ষবরণের আলোয় ততক্ষণে সেজে উঠেছে নানা এলাকা। উত্সবের দিনে শহর এবং শহরতলিতে অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত ছিল পুলিশ- প্রশাসনও। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত বলেন, “বর্ষবরণের উত্সব নির্বিঘ্নেই কেটেছে।”