ঘাটালের মনোহরপুর ১ ব্লকের প্রতাপপুরে শীলাবতী নদীর পাড়ে লাগানো হচ্ছে কুশ গাছ।
প্রাকৃতিক ভাবে নদীর পাড় ভাঙন রুখতে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ঘাটালের ঝুমি এবং শিলাবতী নদীর পাড়ের প্রায় সাড়ে সাতশো মিটার এলাকায় বেনা, কুশ বা ভ্যাটিভার লাগানো শুরু হয়েছে। ঘাটালের বিডিও সঞ্জয় পণ্ডিত বলেন, “সাফল্য পেলে, অন্য এলাকাতেও কুশ ঘাস লাগানো হবে।” গোটা প্রক্রিয়াটি অসম থেকে আসা দু’জন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
প্রশাসন সূত্রে খবর, অসম থেকে ঘাসগুলি কেনা হয়েছে। দাম পড়ছে গাছ পিছু দু’টাকা। একশো দিনের প্রকল্পে ওই ঘাস লাগানো হবে। তাতে আনুমানিক ২০ হাজার শ্রমিক প্রয়োজন হবে।
একত্রে রাখা কুশের সারি।
নদী ভাঙন রোধে সরকারি উদ্যোগে বারংবার পাড় সংস্কারের করা হলেও অভিযোগ ছিল, অধিকাংশ সময়ই তা স্থায়ী হয় না। অথচ, প্রাকৃতিক ভাবে এবং অনেক কম খরচে যে তা করা সম্ভব বলে দাবি করেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অমলকুমার মণ্ডল। বিষয়টি নিয়ে ইউজিসির আর্থিক সহায়তায় পাঁচ বছর গবেষণাও করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। অমলবাবুর দাবি, তাতে সাফল্য মেলে। সফল গবেষকদলের বক্তব্য ছিল, নদী পাড় বা বাঁধের ক্ষয়় রোধে কাশ, কুশ, সর, ইরাগ্রসট্রিস সায়ানইডিস প্রজাতির ঘাস বিশেষ কার্যকরী। ওই গাছগুলি নদীর পাড়কে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রাখে। গাছগুলি লম্বায় সাধারণত ৬-৮ ফুট হলেও মাটির নীচে চলে যায়় প্রায়় ২০-২৫ ফুট। ফলে গাছগুলির গুচ্ছ মূল মাটির ভিতরকে যেমন আঁকড়ে ধরে, তেমনি মাটির উপরিভাগকেও দৃঢ় করে। গবেষক দলের তত্ত্বাবধায়ক অমলবাবু জানান, ঘাসগুলি অঙ্গজ জননে সক্ষম এবং প্রতিকূল পরিবেশেও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারে। যেমন, বেশি দিন জলে ডুবে থাকলেও নষ্ট হয় না।
অমলবাবুর বলেন, “আমরা অনেক আগেই ওড়িশার ভিতরকোনিয়়া, কোনার্ক, পুরি ছাড়াও রাজ্যের শঙ্করপুর, দিঘা, মন্দারমণি এলাকায় গবেষণা চালিয়ে সাফল্য পেয়েছি।” সরকার চাইলে ঘাটাল মহকুমা এলাকাতেও তাঁরা পদ্ধতিগত সহযোগিতায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “সরকার শুধু জমি এবং খরচ দিলেই নিখরচায় আমরা এই সব ঘাস তৈরি করতে পারব। তা হলে আর ভিন রাজ্য ঘাস থেকে আনতে হবে না।”
এ ব্যাপারে ঘাটালের বিডিও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বিষয়টি জানা নেই। কম খরচে এবং জেলা থেকেই এই সুবিধা পেলে খুবই ভাল। সরকারি ভাবেই যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক দলটির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়, তার জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব জানাবো।”
—নিজস্ব চিত্র।