চড়া রোদে হলুদ হয়ে গিয়েছে ঝিঙে গাছের পাতা।—নিজস্ব চিত্র।
আকাশে মেঘের দেখা নেই। চড়া রোদে ক্ষতি হচ্ছে সব্জি চাষের।
তীব্র তাপপ্রবাহের জেরে শুকিয়ে যাচ্ছে গাছের পাতা। বাড়ছে রোগ পোকার আক্রমণ। গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাওয়ায় ফসলের উত্পাদনও কমার আশঙ্কা রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সব্জি চাষিদের সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলা উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক রনজয় দত্ত বলেন, “তাপপ্রবাহের জন্য জেলা জুড়ে সব্জির ফলন কম তো হচ্ছেই, একাধিক ব্লকে বহু সব্জি খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবরও আসছে। প্রচণ্ড রোদে ফসলে রোগের উপদ্রবও বাড়ছে। তবে ভোট সত্ত্বেও দফতরের কর্মীরা খবর পেয়ে এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি পরিদর্শন করছেন। প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।”
উদ্যান পালন দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গত কয়েকদিন তাপমাত্রার পারদ ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্য ঘোরাফেরা করেছে। কয়েকদিন আগে জেলায় ৪৩ ডিগ্রি পর্যন্তও তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল। যদিও গ্রীষ্মকালীন সব্জি চাষে ৩৫-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রায় ফসলের কোনও ক্ষতি হয় না। রনজয় দত্ত বলেন, “ফি বছরই এই সময় কালবৈশাখী-সহ ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি হয়। ফলে বেশি তাপমাত্রা থাকলেও ফসলের ক্ষতি হয় না। কিন্তু এবারে তাপমাত্রা অন্যবারের থেকে ৪-৫ ডিগ্রি বেশি। সঙ্গে কালবৈশাখীরও দেখা নেই। ঝড় হলে গাছ থেকে সব পোকা পড়ে যায়। ফলে ক্ষতিও কম হয়। তবে এবারে ঝড়-বৃষ্টি কম হওয়ায় ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।”
গত সপ্তাহেই তিন দিন ঝড়-বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তারপরও তাপমাত্রার পারদটা সেভাবে কমেনি। ফলে খেতেই সব্জি নষ্ট হতে বসেছে। দফতর সূত্রে খবর,শুধু সব্জিই নয়, তাপপ্রবাহের জেরে পাটের চারাও শুকিয়ে যেতে বসেছে। একই অবস্থা জলদি জাতের বর্ষাকালীন সব্জি চারারও। উল্লেখ্য, জেলার বহু চাষিই এখন থেকেই বর্ষার সব্জি চারা রোপণ করেছেন। আর এই সময়ই পাট চাষও শুরু হয়। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় সব্জি ছাড়াও পাট চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
জেলা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে খবর, জেলার দাসপুর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা রোড, গড়বেতা, ডেবরা, সবং-সহ একাধিক ব্লকে গরমের মরসুমে পটল, ঝিঙে, ঢ্যাঁড়শ, শশা, করলা, বেগুন, লাউ, কুঁদরি, কুমড়ো আর কিছু এলাকায় তরমুজ চাষ হয়। এই সব চাষ মূলত সেচের উপর নির্ভরশীল। তীব্র তাপের জেরে এই সব সব্জিতে মাকড় জাতের শোষক পোকা, সাদা মাছি, বালি পোকা, ফল ছিদ্রকারী পোকার উপদ্রব বাড়ছে। ওই সব পোকা গাছের পাতার রস শুুষে নিচ্ছে। ফলে পাতা হলদু হয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। তাপে শুকিয়ে যাচ্ছে গাছের গোড়াও । ফলে একদিকে যেমন ফলন কম হচ্ছে, তেমনি উত্পাদিত ফসলের গুণগত মানও কমছে। শশা তেতো হয়ে যাচ্ছে, বেগুনে পোকা লেগে তা পচে যাচ্ছে, পটলের ছাল মোটা হয়ে যাচ্ছে। সব্জির গুণগত মান খারাপ হওয়ায় চাষিরা ফসলের দামও ঠিকমতো পাচ্ছেন না। এই সময় জেলায় উত্পাদিত সব্জি হাওড়া, কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় যায়। কিন্তু এবারে ফলন কম হওয়ায় বাইরে যাওয়া তো দূরের কথা, স্থানীয় বাজারেও সব্জির আমদানি আগের বছর তুলনায় অনেকটাই কম। ফলে চাষিরাও লোকসানের মুখে।
দাসপুরের কুঞ্জপুরের বাসিন্দা হরেকৃষ্ণ দোলই, টালিভাটার কালিকিঙ্কর জানা, জটাধরপুরের মদন মেট্যারা বলেন, “তীব্র গরমে দু’তিন দিন ছাড়া ছাড়া সেচ দিতে হচ্ছে। পোকা মারতে কীটনাশক ওষুধও স্প্রে করতে হচ্ছে। চাষের খরচ আগের চেয়ে প্রায় কাটা প্রতি ৪০০ টাকা বেড়েছে। তবে ফলন না হওয়ায় লোকসান হচ্ছে।”