এক ধাক্কায় প্রায় ২০ জন নেতা বাদ পড়তে চলেছেন সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটি থেকে। এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে বলেও দলের এক সূত্রে খবর। জেলা কমিটি থেকে যাঁদের নাম বাদ পড়ার সম্ভাবনা প্রবল, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন সাংসদ রূপচাঁদ মুর্মু। এখন সিপিএমের জেলা কমিটিতে প্রায় ৭০ জন রয়েছেন। এক ধাক্কায় ২০ জন বাদ পড়লে তা নজিরবিহীন হবে। কারণ, এর আগে একসঙ্গে বড়জোর ১০-১২ জন বাদ পড়েছেন।
নতুন জেলা কমিটিতে কে কে আসবেন, তা নিয়েও জোর জল্পনা শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। জানা গিয়েছে, এ বার যোগ্য তরুণ নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে এক ছাত্র নেতা এবং দুই যুব নেতার নতুন জেলা কমিটিতে আসা প্রায় নিশ্চিত। ২০ জনের বাদ পড়া নিয়ে মুখ না খুললেও নতুন মুখ যে গুরুত্ব পাবে তা স্পষ্ট সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের কথায়। তাঁর বক্তব্য, “লোকাল কমিটি, জোনাল কমিটিতেও তরুণ নেতৃত্ব উঠে এসেছেন।” সিপিএমের এক জেলা নেতার কথায়, “সময়ের সঙ্গে নতুন নতুন আশা- আকাঙ্খার জন্ম নিচ্ছে। আর ধরাবাঁধা গতে চললে হবে না। এই সময়ে তরুণ নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিতেই হবে।”
আগামী ৮-১০ ফেব্রুয়ারি মেদিনীপুর শহরে সিপিএমের ২২তম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ বার জেলা সম্পাদকের পদ থেকে দীপকবাবুর সরে যাওয়া প্রায় নিশ্চিত। কারণ, দলের নিয়মানুযায়ী তিন বারের বেশি কেউই সম্পাদকের পদে থাকতে পারবেন না। সেই নিয়মেই দীপকবাবুকে সরে যেতে হবে। নতুন জেলা সম্পাদক কে হবেন, তা নিয়েও জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। দৌড়ে রয়েছেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম দুই সদস্য তরুণ রায়, হরেকৃষ্ণ সামন্ত। দলের অন্দরে তরুণবাবু দীপক-বিরোধী শিবিরের বলেই পরিচিত। এই দুই নেতার লড়াইয়ে মাঝখান থেকে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্য এক সদস্যও ফাঁকা মাঠে গোল দিতে পারেন। ১৯৯৭ সালে ঝাড়গ্রাম শহরে দলের ১৭তম জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন মেদিনীপুর অবিভক্ত। পরে জেলা ভাগ হয়। ২০০২ সালে ১৮তম জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় মেদিনীপুর শহরে। এটাই অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার শেষ সম্মেলন। ২০০৫ সালে চন্দ্রকোনা রোডে অনুষ্ঠিত হয় দলের ১৯তম জেলা সম্মেলন। এই সম্মেলনে দীপক-শিবির এবং তরুণ-শিবির প্রায় আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছিল।
২০০৭ সালে খড়্গপুর গ্রামীণে অনুষ্ঠিত হয় সিপিএমের ২০তম জেলা সম্মেলন। ২০১২ সালে মেদিনীপুর শহরে অনুষ্ঠিত হয় দলের ২১তম জেলা সম্মেলন। সিপিএমের এক জেলা নেতার কথায়, “কোনও জেলা সম্মেলনেই এক ধাক্কায় প্রায় ২০ জন নেতা জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়েননি।” আগে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ৮১। গত সম্মেলনে ৭০ জনের জেলা কমিটি গঠন হয়। পরে ১৬ জনের জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করা হয়।
প্রাক্তন সাংসদ রূপচাঁদ মুর্মু সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। গত বার তিনি জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ পড়েন। দলের এক সূত্রের দাবি, এ বার রূপচাঁদবাবুই চিঠি দিয়ে জেলা কমিটি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে দীপকবাবুর বক্তব্য, “বয়সজনিত কারণে কেউ কেউ অব্যাহতি চাইছেন।” গতবার জেলা কমিটি গঠন নিয়ে দলের অন্দরে নানা প্রশ্ন ওঠে। দেখা যায়, নানা অভিযোগে যাঁকে জোনাল সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, এমনকী জোনাল কমিটির সদস্যও করা হয়নি, সেই তাঁকেই জেলা কমিটিতে রাখা হয়েছে। অথচ, কয়েকজন জোনাল কমিটির সম্পাদকই জেলা কমিটিতে ঠাঁই পাননি।
তাই কি ‘বিদ্রোহের’ ইঙ্গিত মিলছে এখন থেকেই? সিপিএমের এক জেলা নেতা বলছেন, “উপর থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে এ বার মানার প্রশ্নই ওঠে না! কঠিন সময়ে সংগঠনে গতি আনতে তরুণ প্রজন্মের যোগ্য নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিতেই হবে।!”