ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। সব মিলিয়ে এ বার তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে প্রায় ৪৮ হাজার ভোটারের নাম। এর মধ্যে প্রায় ১৬ হাজারই ডুপ্লিকেট অর্থাত্ ভুয়ো ভোটার। এই সব ভোটারের নাম একাধিক জায়গার তালিকায় রয়েছে। তা চিহ্নিত হওয়ার পরই এদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি যে ৩২ হাজার ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়তে চলেছে, তাদের বেশিরভাই মৃত। অনেকে আবার অন্যত্র চলে গিয়েছেন। যাঁরা অন্য এলাকায় চলে গিয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগই ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। জেলা নির্বাচন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য, পুরোমাত্রায় নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করা। সেই কাজই চলছে।”
প্রতি বছরই ভোটার-তালিকা সংশোধনের কাজ হয়। গোড়ায় খসড়া ভোটার-তালিকা প্রকাশিত হয়। তারপর নতুন নাম তোলার আবেদন জমা পড়ে। খসড়া-তালিকা নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তা-ও জমা পড়ে। পরে সব দিক খতিয়ে দেখে জানুয়ারিতে চূড়ান্ত ভোটার-তালিকা প্রকাশিত হয়। এক ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকার একাধিক জায়গায় থাকলেই তাঁকে ভুয়ো ভোটার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ বার ভোটার তালিকা ত্রুটিমুক্ত করতে নির্বাচন কমিশন বিশেষ তত্পর হয়েছে। কমিশন ভুয়ো ভোটারের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছে। সেই তালিকা ধরে বিএলওরা (বুথ লেভেল অফিসার) বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সব দিক খতিয়ে দেখেছেন। তারপর জেলায় রিপোর্ট এসেছে।
জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ভোটার তালিকা থেকে এ বার ৪৮,০২৯ জনের নাম বাদ যাচ্ছে। এর মধ্যে ১৬,১০৮ জন ভুয়ো ভোটার। বাকি ৩১,৯২১টি নামের মধ্যে কেউ মারা গিয়েছেন, কেউ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। অন্যত্র চলে যাওয়ায় অনেকে নিজে থেকেই নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। জেলায় এখন ভোটার সংখ্যা ৪০ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৭০। জানুয়ারিতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। তালিকায় প্রায় দেড় লক্ষ নতুন ভোটারের নাম থাকতে পারে। অবশ্য প্রতি বছরই ভোটার সংখ্যা বাড়ে। এ বছর যেমন ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৫৯৫ জন ভোটার বেড়েছিল। গত বছর ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ১৭৮ জন ভোটার বেড়েছিল।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, ভোটার তালিকা থেকে কোনও ব্যক্তির নাম বাদ দেওয়ার আগে তাঁকে আগে নোটিস পাঠানো হয়। কেন তাঁর নাম বাদ যাবে না, তার স্বপক্ষে কারণ দর্শাতে বলা হয়। ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ১৭ এবং ১৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি একাধিক বিধানসভা এলাকার ভোটার তালিকায় নাম তুলতে পারেন না এবং একই বিধানসভায় একবারই নাম তুলতে পারেন।”
নোটিসে ঠিক কী জানানো হয়? জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, নোটিসে জানানো হয়, তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাচ্ছে যে, নির্বাচক তালিকার প্রদত্ত ঠিকানায় বছরের বেশির ভাগ সময়ই আপনাকে পাওয়া যাচ্ছে না অথবা আপনার নাম ভোটার তালিকার একাধিক জায়গায় অথবা একাধিক ভোটার তালিকায় দেখা যাচ্ছে। সুতরাং আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে, ১৯৫০ এর জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২২ নম্বর ধারায় এবং নির্বাচক নিবন্ধীকরণ বিধি ১৯৬০-এর ২১ (ক) বিধি মোতাবেক আপনি উক্ত বিধানসভায় নির্বাচক হিসেবে নিবন্ধীকরণের যোগ্যতা হারিয়েছেন এবং আপনার নাম তালিকা থেকে বাতিল করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার কিছু বক্তব্য থাকলে আপনি স্বশরীরে নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হয়ে আপনার বক্তব্যের স্বপক্ষে নথিপত্র দর্শাতে পারেন।
জেলা প্রশাসনের ওই আধিকারিকের কথায়, “নোটিসে এ কথাও জানানো হয় যে, যদি নির্দিষ্ট সময়ে আপনি উপস্থিত হতে না পারেন, তাহলে ধরে নেওয়া হবে উক্ত বিষয়ে আপনার কোনও বক্তব্য নেই এবং আর কোনও বিজ্ঞপ্তি না জারি করেই ১৯৫০ এর জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২২ নম্বর ধারা মোতাবেক আপনার নাম বাতিল করা হবে।” ওই আধিকারিকের কথায়, “তালিকাভুক্ত ঠিকানায় অনেক দিন ধরে না থাকার জন্যও এ বার বহু নাম বাদ যাচ্ছে।”