ভাঙচুরের পর ছাত্র সংসদের কার্যালয়।
অশান্তি, গোলমাল যেন পিছু ছাড়ছে না খড়্গপুর কলেজের!
ছাত্র সংসদ কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা নিয়ে টিএমসিপি-র দ্বন্দ্বে বুধবার ফের উত্তেজনা ছড়ায় এই কলেজে। অভিযোগ, শহর টিএমসিপি সভাপতি রাজা সরকার বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে ঢুকে বেধড়ক মারধর করেছেন সংগঠনেরই শহর সহ সভাপতি শেখ হায়দর আলিকে। হায়দর এই কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। রাজা-বাহিনীর হাতে কলেজ ছাত্র কমলেশ বাগও প্রহৃত হন বলে অভিযোগ।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে ছাত্র সংসদের ঘরেই বিবাদে জড়ান টিএমসিপি-র কলেজ সভাপতি মহম্মদ ইসতেয়াক ও বয়েজ কমন রুমের সম্পাদক আকাশ পাণ্ডে। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইসতেয়াক শহর সভাপতি রাজা সরকারের বিরোধী শিবিরের বলেই পরিচিত। সেই বিবাদ থেকে হাতাহাতি শুরু হলে ছুটে আসেন হায়দার ও তাঁর ছাত্র অনুগামীরা। তাঁরা আকাশকে বাধা দেন। এর পরেই আকাশের সমর্থনে কলেজে আসেন কলেজের সাধারণ সম্পাদক সানি দত্ত, ছাত্র অভিজিৎ গিরিরা। অভিযোগ, সানিরা এসে হায়দায়ের উপরে চড়াও হন। ভাঙচুর চালানো হয় সংসদের কার্যালয়েও। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজা সরকার-সহ বেশ কিছু বহিরাগত কলেজে ঢুকে কার্যত তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। সেই সময়ই গুরুতর জখম হন হায়দার ওরফে মান্টা, কমলেশ বাগ-সহ কয়েক জন।
খবর পেয়ে কলেজে পুলিশ পৌঁছয়। রক্তাক্ত অবস্থায় হায়দার ও কমলেশকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হায়দার অনুগামী ইসতেয়াকের দাবি, “দলনেত্রীর ছবিকে অসম্মান করছিল আকাশ। তা নিয়ে কথা বলতেই মারধর শুরু করে। এরপরই বহিরাগত রাজা সরকার বেশ কিছু দুষ্কৃতী নিয়ে ছাত্র সংসদের কার্যালয়ে এসে তাণ্ডব চালায়। হায়দার ও কমলেশ বাধা দিতে গেলে ওঁদের ক্যান্টিনে বেধড়ক মারে রাজার বাহিনী।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শহর টিএমসিপি সভাপতি রাজা সরকার বলেন, “আমি কলেজে যাইনি। ওঁরা কলেজে নানা অসামাজিক কাজ করে। ওরা নিজেদের মধ্যে মারপিট, ভাঙচুর করেছে। তা চাপা দিতে মিথ্যে কথা বলছে।”
খড়্গপুর কলেজে টিএমসিপি-র এই কোন্দল নতুন নয়। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালীন হায়দার ও রাজা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। জখম হন বেশ কয়েক জন ছাত্র। গত ১১ নভেম্বর কলেজে টিএমসিপি-র বহিরাগতরা দাপিয়ে বেড়ানো, শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে ছাত্র পরিষদ। এরপরই বহিরাগতদের কলেজ ঢোকা বন্ধ করতে সচিত্র পরিচয়পত্র নিয়ে ঢোকার বিজ্ঞপ্তি জারি করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারপরেও বহিরাগতদের কলেজে ঢোকা আটকানো যায়নি, তার হাতে গরম প্রমাণ এ দিনের ঘটনাই।
কেন কলেজের গোলমালে রাশ টানতে পারছেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ? কেনই বা বহিরাগতদের ঢোকা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? টিচার ইন চার্জ অচিন্ত্য চট্টোপাধ্যায়ের দায়সারা জবাব, “ওরা জোর করে কলেজে ঢুকে পড়েছিল।” নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কী করে কলেজে ঢুকল তাঁরা? সদুত্তর এড়িয়ে তিনি শুধু বলেন, “কিছু বহিরাগত কলেজে ঢুকে ছাত্রদের মারধর করায় দু’জন জখম হয়েছেন। ঘটনার কথা পুলিশে জানিয়েছি।” এ দিনের গোলমালের জেরে কলেজের পঠনপাঠনে তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি বলে খবর। টিএমসিপি-র জেলা নেতৃত্ব কেন খড়্গপুর কলেজের দ্বন্দ্ব মেটাতে সক্রিয় হচ্ছে না? টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির জবাব, “দু’পক্ষকেই সতর্ক করা হয়েছে। দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করব।” কবে সেই সমাধান হয়, সে দিকেই চেয়ে পড়ুয়ারা।
কলেজের এ দিনের গোলমাল নিয়ে টিএমসিপিকে বিঁধতে ছাড়ছে না ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল। সইফুলের কটাক্ষ, “মা-মাটি-মানুষের ছাত্র সংগঠনের এটাই চরিত্র। দখলের রাজনীতি ওদের রক্তে।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডার জবাব, ‘‘ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যের কলেজগুলিতে ধারাবাহিক নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে টিএমসিপি। এই কলেজও তার ব্যতিক্রম নয়।” বহিরাগতদের কলেজে ঢোকা রুখতে কলেজ কর্তৃপক্ষের আরও সক্রিয়তা প্রয়োজন, বলছেন এবিভিপি-র দুই মেদিনীপুরের পর্যবেক্ষক অসীম মিশ্র। খড়্গপুর কলেজের এ দিনের ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপিও।