মেদিনীপুর আইন কলেজের সামনে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা।—নিজস্ব চিত্র।
নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা এবং ফলপ্রকাশের দাবিতে কলেজে আন্দোলন শুরু করেছিলেন মেদিনীপুর আইন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। তার জেরে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন কর্তৃপক্ষ।
কলেজের ডিরেক্টর মুকুল রায় ছাত্রদের দাবিকে সমর্থন করলেও আন্দোলনের পদ্ধতির সঙ্গে সহমত নন। মুকুলবাবুর কথায়, “এটা ঠিক যে প্রতিটি সেমেস্টারের পরীক্ষা নিতে ও ফলপ্রকাশ করতে সময় লাগছে। এতে ছাত্রছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু তার জন্য দায়ী বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রছাত্রীদের এই আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে করা উচিত ছিল। কলেজে ক্লাস বন্ধ করে, শিক্ষকদের বেরোতে না দিয়ে আন্দোলন করা ঠিক হয়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ফলপ্রকাশ না করা পর্যন্ত কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” আন্দোলনকারী ছাত্রাছাত্রীদের অবশ্য বক্তব্য, এমনিতেই প্রতিটি শিক্ষাবর্ষ এক বছর করে পিছিয়ে থাকে। এখন যা পরিস্থিতি তাতে পাঁচ বছরের পাঠ্যক্রম শেষ করতে সাত বছর লাগবে। বাধ্য হয়েই তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।”
পাঁচ বছরের পাঠক্রমে যে ছাত্রছাত্রীরা ২০০৯ সালে এই আইন কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন চলতি মাসে তাঁদের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলপ্রকাশের কথা। বছরে ২টি করে সেমেস্টারের পরীক্ষা ও ফলপ্রকাশ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনও অষ্টম সেমেস্টারের ফলও বেরোয়নি। প্রতিবাদে বুধবার কলেজে বিক্ষোভ দেখান ছাত্রছাত্রীরা। বিক্ষোভের জেরে কিছুক্ষণের মধ্যেই অষ্টম সেমেস্টারের ফলপ্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর পরীক্ষা ও ফলপ্রকাশে ইচ্ছাকৃত দেরির অভিযোগ তোলেন পড়ুয়ারা। পঞ্চম বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা দাবি করেন, বকেয়া থাকা দু’টি সেমেস্টারের পরীক্ষা দ্রুত নিতে হবে, দু’মাসের মধ্যে ফলপ্রকাশ করতে হবে।
নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা ও ফলপ্রকাশ না হলে আইন ছাত্রছাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, পেশায় যোগ দেওয়ার আগে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় বসতে হয়। বছরে দু’বার, জানুয়ারি ও জুলাই মাসে পরীক্ষা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে আইন কলেজ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করলে দু’টি সেমেস্টারের পরীক্ষা বাকি থাকত না। চলতি মাসেই ছাত্রছাত্রীরা বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় বসতে পারতেন। যাঁরা এলএলএম করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, কলেজের চূড়ান্ত শংসাপত্র জমা দিতে না পারলে সমস্যায় পড়বেন তাঁরাও। তাই ছাত্রছাত্রীরা বুধবার থেকে আন্দোলন শুরু করেন। আর তারপরই ফলপ্রকাশ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। কলেজ কর্তৃপক্ষ এ জন্য বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আঙুল তুলেছেন। মেদিনীপুর আইন কলেজের ডিরেক্টর মুকুলবাবুর কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট করা বোর্ড অব স্টাডিজের চেয়ারম্যান কলকাতার। তাঁর সময় মতোই আমাদের চলতে হয়। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দী বলেন, “আমরা সব সময় কলেজের পাশে থাকার চেষ্টা করি। এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।”