মঞ্চে মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদার উপস্থিতিতে উৎসব শুরু।
জঙ্গলমহলের লোধা-শবরদের লুপ্তপ্রায় ‘চাঙ’ নাচের মতো স্থানীয় লোকশিল্পগুলিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে তুলে ধরতে চায় পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিষয়ক দফতর। লোকশিল্পের মাধ্যমে বিকল্প রুজি-রোজগারেরও চেষ্টা হচ্ছে।
সোমবার বিকেলে ঝাড়গ্রামে জঙ্গলমহল উৎসবের সূচনা করে এ কথা জানান পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাাঁসদা। এ দিন দুপুর দু’টোয় মেদিনীপুর কলেজ মাঠে পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে রিমোট টিপে ফ্লেক্সের আবরণ সরিয়ে জঙ্গলমহল উৎসবের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ঝাড়গ্রাম কুমুদ কুমারী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উৎসব মঞ্চে সুকুমারবাবুর উপস্থিতিতে ‘চাঙ’ নাচ দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়।
অনুষ্ঠানে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “লোধা-শবরদের জীবনচর্যার সঙ্গে জড়িয়ে ‘চাঙ’। জঙ্গলমহলের লোকশিল্পগুলি উপযুক্ত চর্চার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। বিগত তিন বছর ধরে আমরা এমন একটি উৎসবের আয়োজন করার চেষ্টা করছিলাম, যেখানে জঙ্গলমহলের লোকশিল্পীরা এবং সাংস্কৃতিক দলগুলি নিজেদের প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পায়। এ বার সেটা সম্ভব হল।” তিনি জানান, এরপর সরকার সব শিল্পীদের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিষয়ক দফতরের মাধ্যমে জেলা, রাজ্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকস্তরে পরিচিতি দিতে চাই। লোকশিল্পের প্রসার ঘটলে বিকল্প রুজিরও সন্ধান মিলবে। মন্ত্রীর কথায়, “এই উৎসব হল সেই উদ্দেশের প্রাথমিক পদক্ষেপ।”
চলছে আদিবাসী মহিলাদের সাড়পা নৃত্য।
প্রশাসন সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া এই তিন জেলার ২৪টি ব্লকের ৪৮০ লোকশিল্পীর দলকে ধামসা-মাদল দেওয়া হবে। এ দিন মেদিনীপুরে তিনটি দলের হাতে ধামসা-মাদল তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝাড়গ্রামের উৎসব মঞ্চে মন্ত্রী সুকুমারবাবুও কয়েকটি দলের হাতে ধামসা-মাদল তুলে দেন। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিষয়ক দফতরের সচিব এ সুব্বাইয়া স্বাগত বক্তৃতায় বলেন, “জঙ্গলমহলের যে সব উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে, সে সম্পর্কে বাসিন্দাদের অবহিত করার পাশাপাশি, লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে শান্তি ও উন্নয়নের বার্তাও পৌঁছে দিতে চাই আমরা।”
ঝাড়গ্রাম শহরের কুমুদ কুমারী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই উৎসবের যুগ্ম আয়োজক হল পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিষয়ক দফতর ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ। ঝাড়গ্রামে খড় ও বাঁশ দিয়ে মাটির বাড়ির আদলে তৈরি হয়েছে মূল মঞ্চ ও উৎসব-তোরণ। মঞ্চে মাটির বাড়ির দালানের আদলে অতিথিদের বসার জায়গা করা হয়েছে। আলোকমালায় সাজানো হয়েছে উৎসব প্রাঙ্গণ। উৎসব প্রাঙ্গণে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের ৩৫টি স্টল রয়েছে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ, মঙ্গলবার বিকেলে ‘জঙ্গলমহলে প্রকৃতি পর্যটনের বিকাশ’ বিষয়ক একটি আলোচনা সভা হবে। প্রতি সন্ধ্যায় নানা ধরনের আদিবাসী সংস্কৃতি ও লোক সংস্কৃতির নাচ ও গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তিন দিনের উৎসব শেষ হবে কাল বুধবার।
ছবি: দেবরাজ ঘোষ।