কলেজ পাল্টালেন র‌্যাগিংয়ের ‘শিকার’ আদিবাসী তরুণী

মেদিনীপুর গোপ কলেজের হস্টেলে র‌্যাগিংয়ের শিকার প্রথম বর্ষের আদিবাসী ছাত্রীটি শেষমেশ কলেজ বদল করলেন। মঙ্গলবার তিনি ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে শারীরবিদ্যা অনার্সেই ভর্তি হয়েছেন। প্রশাসনিক উদ্যোগেই নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছেন ওই ছাত্রী। এ দিন কলকাতায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি জেনে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। আমি নিজেও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০০:৩৩
Share:

হস্টেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকার সমর্থনে সরব গোপ কলেজের ছাত্রীরা।

মেদিনীপুর গোপ কলেজের হস্টেলে র‌্যাগিংয়ের শিকার প্রথম বর্ষের আদিবাসী ছাত্রীটি শেষমেশ কলেজ বদল করলেন। মঙ্গলবার তিনি ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে শারীরবিদ্যা অনার্সেই ভর্তি হয়েছেন।

Advertisement

প্রশাসনিক উদ্যোগেই নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছেন ওই ছাত্রী। এ দিন কলকাতায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি জেনে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। আমি নিজেও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি।” বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তীর কথায়, “ওই ছাত্রীর যাতে পড়াশোনা ব্যাহত না হয়, সেটা আমরা দেখেছি।” ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাইচাঁদ মাসান্তের আশ্বাস, “এখানে ওই ছাত্রীর কোনও সমস্যা হবে না। আমি নিজে শারীরবিদ্যার অধ্যাপক। পড়াশোনায় সব রকম সহযোগিতা করবো।”

এ দিন দুপুরে পুলিশি ঘেরাটোপে প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী রাজ কলেজে পৌঁছন। ছাত্রী ও তাঁর বাবা ঝাড়গ্রাম থানার আইসি তানাজি দাসের সঙ্গে পুলিশের গাড়িতে চেপে আসেন। এসেছিলেন মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার আইসিও। ওই ছাত্রীর বাবা কোতোয়ালি থানাতেই র্যাগিংয়ের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ভারপ্রাপ্ত সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “ওই ছাত্রীর বিষয়ে রাজ্য সরকারকে জানিয়েছিলাম। রাজ্য সরকারের তরফে ওঁকে সাহায্য করার নির্দেশ পেয়েছি। জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করেই ছাত্রীটিকে এ দিন ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে।” পুলিশের এক সূত্রে খবর, ওই ছাত্রী যাতে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে ভর্তি হতে পারেন, সেই জন্য রাজ্য সরকারের কাছে এক চিঠিও পাঠিয়েছিলেন ভারতীদেবী।

Advertisement

আদিবাসী ওই ছাত্রীকে এখন আর হস্টেলে থাকতে হবে না। তাঁর বাড়ি বাঁকুড়ায় হলেও ঝাড়গ্রামের স্কুলে পড়ার সুবাদে অরণ্যশহরে তাঁদের ভাড়া বাড়ি রয়েছে। ওই তরুণীর মামাবাড়িও ঝাড়গ্রামে। ওই ছাত্রী বলেন, “মন দিয়ে পড়াশুনা করতে চাই। হস্টেলে আর থাকতে চাই না।” তাঁর দাবি, “যাদের জন্য আমাকে গোপ কলেজ ছাড়তে হল, তাঁরা যেন শাস্তি পায়।” ছাত্রীটির বাবাও বলেন, “গোপ কলেজে আর মেয়েকে পড়ানোর ভরসা রাখতে পারলাম না।” ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে মেয়েকে ভর্তির ব্যাপারে পুলিশ সুপারের সহযোগিতার কথাও স্বীকার করেছেন তিনি।

আদিবাসী ছাত্রী ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজেও ভর্তির আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন। মেধা তালিকায় নাম প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু তিনি মেদিনীপুরের রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়ে (গোপ কলেজ) শারীরবিদ্যা অনার্সে ভর্তি হন। হস্টেলে থাকা শুরু করেন। সেখানেই তাঁর রুমমেট দ্বিতীয় বর্ষের দুই ছাত্রী তাঁকে র্যাগিং করছে বলে রবিবার মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ জানান আদিবাসী ছাত্রীটির বাবা। অভিযুক্ত দুই ছাত্রীকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মঙ্গলবার। ডাকা হয়েছিল গোপ কলেজের অধ্যক্ষা কৃষ্ণা মাইতি, হস্টেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষিকা তথা কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান রিনা পাল, হস্টেলের সহায়িকা বিজলী জানাকেও। জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ ভিডিওগ্রাফি করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতীদেবীর বক্তব্য, “তদন্তের জন্যই এ দিন শিক্ষিকা ও দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।”

র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠার পর গোপ কলেজের পরিচালন সমিতির জরুরি বৈঠক ডাকতে চলেছেন কর্তৃপক্ষ। কলেজের এক সূত্রে খবর, আগামী বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার এই বৈঠক হতে পারে। ঘটনায় ইতিমধ্যে কলেজের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। র্যাগিং-কাণ্ডে সরব হয়েছে আদিবাসীদের সামাজিক যুব সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি মাডওয়া জুয়ান গাঁওতা’। সংগঠনের সম্পাদক প্রবীর মুর্মু বলেন, “ঝাড়গ্রামে ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে আমরা পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে এসেছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদিবাসী নিগ্রহ প্রতিরোধ আইনে মামলা করার দাবি করছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement