কোথাও জাঁক, কোথাও তাল কাটল শব্দে

পুজো জমজমাট। থিমেও জোর টক্কর। তবে সব কিছুর তাল কেটে দিচ্ছে শব্দ তাণ্ডবই এ ছবি মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড়ের। শুধু শহর নয়, শহরের আশপাশের বহু মানুষ এখানে পুজো দেখতে আসেন। রবিবার এঁদের অনেককে নিরাশ হতে হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২২
Share:

পুজো জমজমাট। থিমেও জোর টক্কর। তবে সব কিছুর তাল কেটে দিচ্ছে শব্দ তাণ্ডবই এ ছবি মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড়ের।

Advertisement

শুধু শহর নয়, শহরের আশপাশের বহু মানুষ এখানে পুজো দেখতে আসেন। রবিবার এঁদের অনেককে নিরাশ হতে হয়েছে। কারণ, শব্দ তাণ্ডবের জেরে সব পুজো যে দেখাই হয়ে ওঠেনি! দু’চারটে পুজো দেখে ফিরতে হয়েছে। শহরের বাসিন্দা চন্দ্রশেখর দাস, শান্তনু মাইতিরা বলছেন, “সব বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এত বিকট শব্দে সাউণ্ড বক্স বাজছে যে সব পুজো দেখা সত্যিই মুশকিল।” পরিস্থিতি একই থাকলে আগামী দিনে কলেজ মোড়ে দর্শক সংখ্যা কমে যাবে, অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন সে কথা।

কলেজ মোড়ের পুজো দেখতে অনেকে বছরভর অপেক্ষা করেন। রাজনীতির আকচাআকচিই এখানকার মূল আকর্ষণ। এক-একটি পুজো দেখতে বেশ কিছুক্ষণ সময়ও লাগে। তবে শব্দ-তাণ্ডব সব কিছুর তাল কেটে দিয়েছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি দেখে দুপুরের পর অবশ্য সক্রিয় হয় পুলিশ। সাদা পোষাকের পুলিশও কলেজ মোড়ে নজরদারি চালাতে শুরু করে। বেশ কয়েক’টি পুজো কমিটিকে সতর্ক করা হয়। পুলিশের ধমক খেয়ে বিকেলের দিকে কয়েকটি পুজোর উদ্যোক্তারা স্পিকার কমিয়ে নেন।

Advertisement

অন্য বারের মতো এ বারও দুই মেদিনীপুরের সরস্বতী পুজোয় ছিল আগ্রহ, জাঁকও। রাজ্যের অন্য এলাকার সঙ্গেই হলদিয়া শিল্পাঞ্চলেও বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে ভিড় জমান উৎসাহীরা। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্লাবের পক্ষ থেকে পুজো হয়। শনি ও রবিবার আট থেকে আশি অনেকেই বহু মণ্ডপে ভিড় জমালেন। দুর্গাচক, ব্রজলালচক, মহিষাদল-সহ সর্বত্রই ভিড় ছিল।

এ বারের পুজোতেও থিমে আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। যেমন হলদিয়া টাউনশিপের প্রতিবিম্ব ক্লাব বাঁশি দিয়ে মণ্ডপ বানিয়েছে। দু’দিন ধরে চলে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ডায়মন্ড ক্লাবের মণ্ডপে আস্ত গ্রাম উঠে এসেছে। গ্রামীণ জীবনের টুকরো টুকরো ছবি সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। হলদিয়ার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের প্রাক্তনীদের সংস্থা ‘জাভেরিয়ান’ বৃক্ষরোপন-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল কারুকৃত সমাজ কল্যাণ সংস্থার পুজোতেও। হলদিয়া টাউনশিপের লোকজন ভিড় জমিয়েছিলেন দুর্গাচক লাভার স্টার, সমাজকল্যাণ দিগন্ত, শঙ্খিনী, ল্যান্ডমার্ক-সহ বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে। বেশ কিছু আবাসনেও সরস্বতী পুজো হয়। মহিষাদলের সিনেমা মোড়ের ছাত্র সমন্বয় নামে একটি ক্লাবের পক্ষ থেকে পুজো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। বাসস্টপের কাছে সানডে ক্লাবের পুজোর মণ্ডপ হয় একটি পুরানো বাড়ির আদলে। চার দিন ধরে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনও থাকছে।

সরস্বতী আরাধনায় জাঁক রয়েছে কাঁথিতেও। শনিবার অধিকাংশ বাড়িতে পুজো হলেও, রবিবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সবর্জনীন সংগঠন ও ক্লাবগুলিতে পুজো হয়। কাঁথি কিশোরনগর শচীন্দ্র শিক্ষাসদন, কিশোরনগর শিশুশিক্ষা নিকেতন, দিঘা দেবেন্দ্রলাল জগবন্ধু শিক্ষাসদন, বটতলা আনন্দময়ী হাইস্কুল, করঞ্জি সুভাষ বিদ্যাভবন, কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজ-সহ মহকুমার অধিকাংশ স্কুল-কলেজগুলিতে রবিবার সকাল থেকেই পুষ্পাঞ্জলির জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভিড় ছিল।

এ দিনই বহু স্কুলে প্রীতিভোজের আয়োজনও ছিল। সেখানে যোগ দেয় ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকারা এবং অভিভাবকেরা। ইনার হুইল ক্লাবে এক আন্তর্জাতিক মহিলা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে কাঁথির কিছু স্কুলকে নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা হয়। ‘হাতেখড়ি’ নিয়ে অভিনব উদ্যোগ ছিল রামনগরের বিজয়কৃষ্ণ সরোজিনী ফাউন্ডেশন-এর। করঞ্জি সুভাষ বিদ্যাভবন ও দিঘা দেবেন্দ্রলাল জগবন্ধু শিক্ষাসদনের পুজো মণ্ডপে তিরিশ জন নব পড়ুয়ার হাতেখড়ি-র ব্যবস্থা ছিল। তা নিয়ে অভিভাবক, পড়ুয়া-শিক্ষকদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। নব পড়ুয়াদের হাতে স্লেট, বর্ণপরিচয়, চক-চকলেট ও শুভেচ্ছাপত্র তুলে দেওয়া হয়।

বাগদেবীর আরধনায় মেতেছে তমলুক, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, ময়না, কোলাঘাট, মেচেদা, পাঁশকুড়াও। শনিবার এলাকায় কিছু পুজো হলেও অধিকাংশ প্রাথমিক, হাইস্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন ক্লাবের পুজো হয়েছে রবিবারই। এ দিন সকালে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বল্লুক নবীন সঙ্ঘের পুজোর উদ্বোধন করেন সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তমলুক কলেজের কাছে ‘ছাত্রবন্ধু’র পুজোর উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement