ধর্নায় মনোজিৎ। নিজস্ব চিত্র
ঘর বাঁধবে বলেই কলেজ পড়ুয়া এক তরুণীর বাড়ির সামনে ধর্নায় বসেছিল এক যুবক। বন্ধুবান্ধবরাও সঙ্গে ছিল। শেষমেশ দুই বন্ধু-সহ ওই যুবকের ঠাঁই হল শ্রীঘরে।
ঘটনাটি ঘটেছে ঘাটালের জয়বাগ গ্রামে। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার ঘটনার সূত্রপাত সকাল দশটা নাগাদ। কলেজ পড়ুয়া ওই তরুণী তখন বাড়িতেই ছিলেন। আচমকা কতগুলি বাইক তাঁর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর বিয়ের দাবি নিয়ে ধর্নায় বসে যান মনোজিৎ হাইত নামে ওই যুবক ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু।
ক’দিন আগেই উত্তরবঙ্গের এক যুবক প্রেমিকার বাড়ির সামনে বিয়ের দাবিতে ধর্নায় বসে আলোড়ন ফেলেছিলেন। সে ক্ষেত্রে চারহাত একও হয়েছিল। তারপর শহর মেদিনীপুরেও এমন ধর্নার দৃশ্য সামনে আসে। সেখানে অবশ্য সম্পর্ক জোড়েনি। তবে ঘাটালে বিয়ের জন্য ধর্নায় বসে একেবারে গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় শোরগোল পড়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মনোজিতের বাড়ি আরামবাগের খানাকুল থানার মদনবাটি গ্রামে। বছর বাইশের মনোজিতের গ্রামেই ছোট ব্যবসা রয়েছে। ওই তরুণী আগে সেখানেই থাকতেন। এখন ঘাটালের জয়বাগে থাকেন। তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, মনোজিৎ তাঁর পূর্ব পরিচিত। বছর তিনেক ধরে তাঁকে উত্যক্ত করতেন, বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। রাজি না হওয়ায় আগেও মনোজিৎ তাঁকে হেনস্থা করেছেন বলে অভিযোগ ওই তরুণীর। মাস আষ্টেক আগেও একবার মনোজিৎ ওই তরুণীকে অপহরণ করেন বলেও অভিযোগ। তখন আরামবাগ থানায় অভিযোগ জানিয়েছিল তরুণীর পরিবার। পরে পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে।
এ দিনও তরুণীর অভিযোগ, “বাড়িতে ঢুকে মনোজিৎ আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাবা ও মা আটকাতে এলে তাঁদের ঠেলে সরিয়ে দেয়। তখনই চিৎকার করি আমি। পাড়ার লোকজন এসে বাঁচায়।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গ্রামের লোকজনের তাড়া খেয়ে মনোজিতের কয়েকজন বন্ধু চম্পট দেয়। কিন্তু দুই বন্ধু মনোজিৎকে ছেড়ে যায়নি। তাঁরা তিন জন তরুণীর বাড়ির গেটের সামনে বসে পড়েন। ওই তরুণীকে তাঁদের সঙ্গে যেতে হবে বলে দাবি তোলে। মনোজিতের আত্মীয় সুজিত মালিকেও দাবি, “ওই তরুণীর সঙ্গে মনোজিতের বহু দিনের সম্পর্ক। বিয়ে হওয়ারও কথা ছিল। মাস দুয়েক হল মেয়েটি যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তাই মনোজিৎ এ দিন ধর্নায় বসেছিল।”
এরপর তরুণীর পরিবার ও গ্রামবাসীর সঙ্গে বচসা বাধে মনোজিতদের। খবর পেয়ে ঘাটাল থানার পুলিশ গ্রামে পৌঁছয়। পুলিশের সামনেও মনোজিৎ ওই তরুণীকে বিয়ে করার কথা জানান। দাবি করেন, ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তবে পুলিশ জানিয়েছে, দাবির সপক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি ওই যুবক। পরে ওই তরুণী লিখিত ভাবে পুলিশের কাছে মনোজিতের বিরুদ্ধে অপহরণের চেষ্টা, হুমকি-সহ একাধিক অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতে পুলিশ মনোজিৎ ও তাঁর দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করে।