বীরসিংহ গ্রামে ধূপ তৈরিতে ব্যস্ত মহিলারা। নিজস্ব চিত্র
শিক্ষা আনে চেতনা।
বীরসিংহের মেয়েরা বলছে, বেশি পড়ে হবেটা কী!
পরিণতি যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বীরসিংহের সিংহশিশুর গ্রামে মেয়েরা এখন চাকরি করেন। কিন্তু সংখ্যায় তাঁরা ক’জন! হাতে গোনা কয়েক জন মেয়ে স্কুলে পড়ান। শুধুই স্কুলশিক্ষিকা! অন্য পেশায় প্রতিষ্ঠিত কোনও মেয়ের কথা শোনা যায়নি গ্রামে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক চাকরি নয়। সাংস্কৃতিক জগতে জেলায় সাড়া ফেলেছে এমন নামও বীরসিংহে পাওয়া যায়নি। মেয়েদের খেলাধূলোর তালিকাতেও বিশেষ কৃতিত্বের উল্লেখ নেই বীরসিংহের। অবস্থা আরও খারাপ তফসিলি জাতি, জনজাতি প্রধান পাড়া গুলিতে। খামতি যে থেকে গিয়েছে তাঁদের তরফে তা মানছেন বীরসিংহের সফল মেয়েদের একটা বড় অংশ। তাঁদের মধ্যে একজন মেছোগ্রাম পূর্ণচন্দ্র বালিকা বিদ্যায়তন স্কুলের শিক্ষিকা রাসমণি মান্ডি বললেন, “আমাদের গ্রাম যে অহঙ্কার করার মতো গ্রাম সেটাই হয়তো আমরা নিজেরাই বুঝিনি। তা হলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত।”
স্বনির্ভর হওয়ার, আত্মপরিচিতি তৈরির তাগিদটাই তৈরি হয়নি। এলাকার কিছু বয়স্ক শিক্ষিত মানুষই বলছেন, “হবেই বা কী করে। সরকারের তরফ থেকে জীবন বদলে দেওয়ার শিক্ষা,পরিকাঠামোর ব্যবস্থা কী আদৌ করা হয়েছে।” ১৯৯২ সালে বীরসিংহ গ্রামে শুরু হয়েছিল বিদ্যাসাগর মেলা। একবার মহিলাদের স্বনির্ভরতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে সে সব বন্ধ। গ্রামেরই বাসিন্দা ঘাটাল বসন্ত কুমারী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শ্যামলী রায় ও খড়ারের এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা রিমা ঘোষ বলছিলেন, “এখন নিজেদের উদ্যোগে কিছু মেয়ে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছেন। নার্সিং প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কেউ সরকারি চাকরির তালিম নিচ্ছেন। এতটুকুই।” গ্রামের বাসিন্দা করুণাময়ী মুখোপাধ্যায় বললেন, “আমারও বহু বছর বিয়ে হয়েছে। মেয়েদের নিয়ে কোনও ভাবনা কানে আসেনি। যতটুকু হচ্ছে সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে।”
বিদ্যাসাগরের দুশো বছরের জন্মদিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু মূল সমস্যার দিকে কি এ বার নজর দেওয়া হবে? প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, বিষয়টি সত্যিই ভাবার মতো। এতদিন যে এ নিয়ে হেলদোল দেখা যায়নি এটাও ঠিক।” এক আধিকারিকের সংযোজন, “শুনেছি বীরসিংহ মডেল গ্রাম হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। তার পরেও জীবনের দিশা দেখানোর মত শিক্ষা না দেওয়াটাতো আমাদেরই ব্যর্থতা।”