গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
স্বামীর মৃত্যুর প্রায় আড়াই বছর বাদে সুবিচারের দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর এককালের দেহরক্ষীর স্ত্রী সুপর্ণা চক্রবর্তী। এ নিয়ে বুধবার রাতে কাঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সুপর্ণা।
শুক্রবার সকালে সুপর্ণার সেই অভিযোগপত্রের প্রতিলিপি-সহ একটি টুইট করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। সেখানে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নাম জুড়ে দিয়ে লেখেন, ‘আপনি বা আপনার কেন্দ্রীয় দল এই পরিবারটি বা এই মহিলাকে চেনেন? ওঁর স্বামী আপনাদের এক নেতার দেহরক্ষী ছিলেন। ওঁর চিঠিটা পড়ে দেখুন। এখনেও রাখাল বেরার নাম রয়েছে। আপনার বিরোধী দলনেতা এই বিধবার প্রশ্নগুলি এড়িয়েই যাবেন।’
নিজের অভিযোগপত্রে একগুচ্ছ প্রশ্নে কার্যত শুভেন্দুর বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তাঁর প্রাক্তন দেহরক্ষীর স্ত্রী সুপর্ণা। সেই সঙ্গে তাঁর স্বামীর ‘মৃত্যু-রহস্যে’র পিছনে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের দাবিও করেছেন তিনি। সুপর্ণার এফআইআরের ভিত্তিতে এ বার খুনের মামলা রুজু করেছে কাঁথি থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, সুপর্ণার অভিযোগ পেয়ে কাঁথি থানায় ৩০২ এবং ১২০বি ধারায় এফআইআর দায়ের হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সুপর্ণার স্বামী রাজ্য পুলিশের আর্মড ফোর্সের জওয়ান শুভব্রত চক্রবর্তী প্রায় ৬-৭ বছর শুভেন্দুর দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। প্রায় আড়াই বছর আগে ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর সকাল ১১টা নাগাদ কাঁথির পুলিশ ব্যারাকে মাথায় গুলি লেগে গুরুতর জখম হন শুভব্রত ওরফে বাপি। দিনভর কাঁথি হাসপাতালে জখম অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। বহু টানাপড়েনের পর ১৩ অক্টোবর রাতে শুভব্রতকে কাঁথির হাসপাতাল থেকে একটি আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্স করে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর সেই হাসপাতালেই মারা যান শুভব্রত।
এই ঘটনার পর প্রায় আড়াই বছর কেটে গেলেও এ নিয়ে কোনও অভিযোগ করেননি পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের বাসিন্দা সুপর্ণা। তবে স্বামীর ‘মৃত্যু-রহস্য’ সমাধানের জন্য বুধবার পুলিশের কাছে আবেদন করেছেন তিনি। অভিযোগপত্রে একঝাঁক প্রশ্ন তুলে সুপর্ণার দাবি, ‘প্রথম থেকে স্বামীর মৃত্যু নিয়ে আমার মনে সন্দেহ ছিল। আমি কখনওই উত্তর পেলাম না শুভেন্দু অধিকারীর সিকিউরিটি হিসেবে কাজ করা সত্ত্বেও আমার স্বামী কেন গুলিবিদ্ধ হলেন? চিকিৎসার জন্য আমার স্বামীকে কলকাতায় স্থানান্তরে কেন দেরি করা হল?’
সুপর্ণা চক্রবর্তীর অভিযোগপত্র। —নিজস্ব চিত্র।
স্বামীর মৃত্যুর জন্য ওই ঘটনার সময় রাজ্যের তৎকালীন সেচমন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দুকেই কার্যত দায়ী করেছেন পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা সুপর্ণা। তবে কেন এত দিন তিনি চুপ ছিলেন, সে ব্যাখ্যাও রয়েছে তাঁর অভিযোগপত্রে। সুপর্ণা লিখেছেন, ‘সেই সময় শুভেন্দু অধিকারী জেলায় ও রাজ্যে একজন শক্তিশালী ব্যক্তি ছিলেন। তাই ওঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পাই। দু’মেয়েকে নিয়ে থাকি। তাই কাউকে কিছু বলে উঠতে পারনি। কিন্তু এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটায় বিচার পেলেও পেতে পারি।’
তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই অভিযোগপত্রে সাম্প্রতিক বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা শুভেন্দুর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত রাখাল বেরা, হিমাংশু মান্না এবং স্বদেশ দাসের নামও উল্লেখ করেছেন সুপর্ণা। চিঠিতে সুপর্ণার দাবি, ‘(আমার স্বামীর) দেহ ময়নাতদন্তের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত শুভব্রত’র দাদা দেবব্রত চক্রবর্তী সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁকে ধমক দেন (সেখানে) উপস্থিত রাখাল বেরা।’ সুপর্ণার আরও দাবি, ‘শুভেন্দুবাবু এই বয়ানে অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে জানান রাখাল। চিকিৎসকও দেহ ময়নাতদন্তে রাজি হয়নি। অবশেষে এক পুলিশ আধিকারিক এসে বয়ান দেওয়ার পর দেহ ময়নাতদন্ত হয়।’ অভিযোগপত্রের শেষ দিকে সুপর্ণা লিখেছেন, ‘মাসখানেক আগে গত ১৫ মে দুপুর আড়াইটে নাগাদ হিমাংশু মান্না এবং স্বদেশ দাস বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসা করে, কেউ ফোন করেছিল কি না।’ এই ঘটনার পর থেকেই তিনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বোধ করতে থাকেন বলে দাবি সুপর্ণার। এই পরিস্থিতিতে স্বামীর ‘মৃত্যু-রহস্য’ সঠিক ভাবে তদন্ত করে প্রকৃত সত্য প্রকাশ করার আবেদন তাঁর।