Teenage Pregnancy

চিন্তা বাড়াচ্ছে নাবালিকা প্রসূতি

জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের ২১টি ব্লকের মধ্যে ১৩টি ব্লকে নাবালিকা গর্ভধারণের হার ২০ শতাংশের বেশি। একাধিক ব্লকে ২৫ শতাংশের বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

নাবালিকা মায়ের সংখ্যা সে ভাবে কমছে না। উদ্বেগের ছবি পশ্চিম মেদিনীপুরে। দেখা যাচ্ছে, এই জেলায় প্রসূতির প্রায় ২১ শতাংশই নাবালিকা। অর্থাৎ, জেলায় ১০০ জন প্রসব করলে, তার মধ্যে গড়ে ২১ জনের বয়স ১৮-র কম।

Advertisement

জেলায় ২১টি ব্লকের মধ্যে ১৩টি ব্লকেই ওই হার ২০ শতাংশের বেশি। নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা চিন্তা বাড়াচ্ছে জেলা প্রশাসনের, জেলা স্বাস্থ্য দফতরেরও। জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘‘বাল্যবিবাহ আটকাতে নিচুস্তর পর্যন্ত পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নাবালিকাদের গর্ভধারণের ঝুঁকি সম্পর্কেও সচেতন করা হচ্ছে।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গীর কথায়, ‘‘অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ঠেকাতে সচেতনতামূলক প্রচার চলছে।’’

বাল্যবিবাহ রোধে কন্যাশ্রী-রূপশ্রীর মতো প্রকল্পের নিবিড় প্রচার চলছে বলে দাবি। তাও নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যায় সে ভাবে রাশ টানা যাচ্ছে না কেন, প্রশ্ন উঠছে। জেলা প্রশাসনেরই এক সূত্রে খবর, এর প্রধান কারণ, বাল্যবিবাহ ঠেকাতে না পারা। ওই সূত্রে খবর, ২০২২ এর এপ্রিল থেকে ২০২৩ এর মার্চ পর্যন্ত, এই ১২ মাসে জেলায় ৬১,০১৬ জন প্রসব করেছেন। এর মধ্যে ১২,৫১৫ জনই নাবালিকা। শতাংশের নিরিখে ২০.৫ শতাংশ প্রসূতি নাবালিকা। ২০১৯-’২০ তে ওই হার ছিল ২৬.৭ শতাংশ। ২০২০- ’২১ এ বেড়ে হয়েছিল ২৭ শতাংশ। ২০২১-’২২ এ কমে হয়েছিল ২৬.২ শতাংশ। ২০২২- ’২৩ এ হয়েছে ২০.৫ শতাংশ।

Advertisement

জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের ২১টি ব্লকের মধ্যে ১৩টি ব্লকে নাবালিকা গর্ভধারণের হার ২০ শতাংশের বেশি। একাধিক ব্লকে ২৫ শতাংশের বেশি। ওই ১৩টি ব্লক হল— গড়বেতা-১, গড়বেতা- ২, গড়বেতা- ৩, খড়্গপুর-১ ও ২, শালবনি, চন্দ্রকোনা ১ ও ২, কেশপুর, সবং, পিংলা, কেশিয়াড়ি, দাঁতন-২। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক শোনাচ্ছেন, ‘‘কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়া একটা সামাজিক সমস্যা। কিছু এলাকায় এই সমস্যা বেশি। এর জট অনেক গভীরে। তাই মেটাতে আরও কিছু সময় লাগবে।’’

চিকিৎসকেরা মনে করিয়েছেন, ১৮ বছরের কমে প্রসবের ক্ষেত্রে মা ও সন্তানের নানা সমস্যা হয়। ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সেই ছেলেমেয়েদের শরীর ও মনের পূর্ণ বিকাশ ঘটতে থাকে। তার আগে স্তন, ডিম্বাণু বা গর্ভাশয়ের মতো অঙ্গের বিকাশ ঘটে না। ফলে নাবালিকা মায়েদের গর্ভপাতের ও রক্তক্ষরণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। নবজাতকদেরও গঠনগত ত্রুটি এবং পুষ্টির সমস্যা দেখা দেয়। নাবালিকা মায়ের সংখ্যা সে ভাবে কমছে না। জেলায় সার্বিকভাবে এর প্রভাব পড়ছে প্রসূতি মৃত্যু, শিশু মৃত্যুতে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, ‘‘যে এলাকায় নাবালিকা গর্ভধারণের হার বেশি, সেই এলাকায় প্রসূতি মৃত্যুর হারও বেশি।’’

বাল্যবিবাহ রুখতে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। দুঃস্থ পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়েতে সহায়তার জন্য চালু হয়েছে রূপশ্রী। তাও কেন বাল্যবিবাহে রাশ টানা যাচ্ছে না, প্রশ্ন উঠছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নাবালিকা বিয়ের কুফল প্রচার করা হচ্ছে। জেলার কোন কোন এলাকায় বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেশি, ইতিমধ্যেই এমন কিছু এলাকা চিহ্ণিত করা হয়েছে। এলাকাওয়াড়ি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement