প্রতীকী ছবি।
এক মাসের বেশি হতে চলল। জেলায় সমস্ত কলেজে অনলাইন পঠনপাঠন চালু হলেও তার সুযোগ থেকে এখনও সিংহভাগ পড়ুয়া বঞ্চিত বলে
অভিযোগ উঠেছে।
শহর এলাকার কলেজগুলিতে সাম্মানিক বিভাগে কুড়ি থেকে তিরিশ শতাংশ পড়ুয়া অনলাইন পঠনপাঠনের সুবিধা পাচ্ছেন। তবে অধিকাংশ কলেজেই পাশ কোর্সের পড়ুয়ারা এর সুবিধা পাচ্ছেন না বলে জানা গিয়েছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পূর্ব মেদিনীপুরের ২১টি কলেজেই খোঁজ নেওয়ার পর এমন তথ্য সামনে এসেছে। অনলাইন পঠনপাঠন নিয়ে একই অভিজ্ঞতা পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের কলেজ পড়ুয়াদের।
করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন চলাকালীন স্কুল থেকে কলেজ থেকে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ব্ল্যাকবোর্ড-চক-ডাস্টারে পড়ানোর পদ্ধতি বদলে গিয়েছে স্মার্ট ফোনে। সেখানেই ভিডিয়ো কল, হোয়াটস্অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষক ও পড়ুয়ার মত বিনিময় চলছে। ইউজিসি(ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন)-র সুপারিশ মেনে অনলাইন পঠনপাঠন শুরু করেছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজ সূত্রে খবর, গত ১৬ মার্চ থেকে কলেজে বিজ্ঞান, কলা এবং বাণিজ্য বিভাগে অনলাইন পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। কলেজের ওয়েবসাইটে বিষয়ভিত্তিক পঠন পাঠনের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হচ্ছে। বিভাগীয় অধ্যাপকেরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু তা সত্বেও ওই কলেজের মাত্র ২০-২৫ শতাংশ সাম্মানিক (অনার্স) বিভাগের পড়ুয়াদের অনলাইন পঠনপাঠনে যুক্ত করা গিয়েছে। এগরা সারদা শশীভূষণ মহাবিদ্যালয়ে বুধবার কলেজের অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় অধ্যাপক এবং পড়ুয়াদের মধ্যে অনলাইন পঠনপাঠনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স হয়। সেখানে কলেজের বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিভাগের ৮০ শতাংশ পড়ুয়া অনলাইন পঠনপাঠনে উপকৃত হচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে ওই দুটি বিভাগে পাঠ্যক্রমের ৮৫ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তমলুক কলেজেও বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং কলা বিভাগে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিষয়বস্তু তুলে ধরা হচ্ছে। ওই কলেজে ৫০ শতাংশেরও কম পড়ুয়া অনলাইন পঠনপাঠনে যুক্ত বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে।
হলদিয়া গভর্মেন্ট কলেজে সাম্মানিক বিভাগের ৬০ শতাংশ পড়ুয়া অনলাইন পঠনপাঠনে যুক্ত হতে পেরেছেন। তবে পাশ কোর্সের পড়ুয়ারা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। গ্রামীণ এলাকার কলেজগুলিতে অনলাইনে পঠনপাঠনের অবস্থা বেশ করুণ। রামনগর কলেজের ওয়েবসাইটে ৮০০ জন পড়ুয়া যোগ দিতে পেরেছেন। তা ছাড়া বিভাগীয় অধ্যাপকেরা যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছেন, তাতেও মাত্র ৩০ শতাংশ পড়ুয়া যোগ দিয়েছেন। নন্দীগ্রাম সিতানান্ডা কলেজে স্নাতক স্তরে ৩০-৪০ শতাংশ পড়ুয়া অনলাইন পঠনপাঠনে রয়েছেন। মোটের উপর প্রতিটি কলেজেই বেশ কিছু সংখ্যক পড়ুয়া অনলাইন পঠনপাঠন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ।
করোনা পরিস্থিতিতে আগামী দিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে চিরাচরিত পদ্ধতির পরিবর্তে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা আনার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মরিয়া হয়ে উঠলেও তাতে প্রকৃতপক্ষে কত পড়ুয়া উপকৃত হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কলেজগুলির মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেখানে এমন ছবি উঠে এসেছে, সেখানে হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুলগুলির ছবিটা কী দাঁড়াবে প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলির অধ্যক্ষ সংগঠনের সম্পাদক ও কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজের অধ্যক্ষ অমিত কুমার দে বলেন, ‘‘সিংহভাগ পড়ুয়া এবং অধ্যাপকদের একাংশের স্মার্ট ফোন না থাকা এবং গ্রামীণ এলাকায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত সমস্যায় কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে ঠিকই। তবে স্কুল স্তরে অনলাইন পঠন-পাঠন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দূরদর্শন যথেষ্ট সহায়ক বলেই মনে করা হচ্ছে। কলেজগুলিতে যতটা সম্ভব পড়ুয়াদের অনলাইন পঠনপাঠনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। বাকিটা রাজ্য সরকার এবং ইউজিসি নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)