লকডাউনের মধ্যে কাঁথা তৈরির কাজ চলছে গড়বেতার এক গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
চলছে লকডাউন। বন্ধ শ্যুটিং। টিভিতে চলছে পুরানো ধারাবাহিক। অখণ্ড অবসর। এই সুযোগে কেউ করছেন নকশি কাঁথা। কেউবা আসন।
টিভিতে মন বসছে না বছর পঁচাশির মেনকা মাইতির। গড়বেতার রাজবল্লভপুর গ্রামের বাড়ির বারন্দায় তিনি ইতিমধ্যে খান তিনেক কাঁথা তৈরি করে ফেলেছেন। সেলাই থামিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এখন সময় পেয়েছি, কয়েকটা কাঁথা করে রাখছি। শীতের সময় নাতিপুতিদের কাজে লাগবে।’’ এই গ্রামেরই বাসিন্দা স্বাস্থ্যকর্মী স্মৃতিকণা মাইতি, সাবিত্রী মাইতি। কাঁথা সেলাইয়ে মগ্ন তাঁরাও। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন ব্যস্ত। তারই ফাঁকে সময় করে স্মৃতিকণা পুরনো শাড়ির পাড় থেকে সুতো বার করে তৈরি করছেন কাঁথা। স্মৃতিকণা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্র আর হাসপাতালের কাজের ফাঁকে সময় পেলেই বসে যাচ্ছি কাঁথার কাজে।’’ গড়বেতার সন্ধিপুরের অঞ্জলি ঘোষ, ধাদিকার কৃষ্ণা মণ্ডল দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরেই বসে পড়ছেন কাঁথা করতে। ফোনে তাঁরা বলেন, ‘‘বহুদিন সেলাই করিনি। এখন ঘরেই বন্দি। বাইরে গল্প বন্ধ। টিভিতেও পুরনো সিরিয়াল। তাই অনেকদিন পর কাঁথা করতে শুরু করেছি।’’
শুধু কাঁথা নয়। শুরু হয়েছে আসন শিল্পও। চটের বস্তা কেটে সেখানে সুতো আর নানা রঙের উল দিয়ে করা হচ্ছে আসন। গোয়ালতোড়ের হুমগড়ের অঞ্জলি মাহাতো, মঙ্গলা কালিন্দীরা আসন করা থামিয়ে বলেন, ‘‘বছর দশেক আসন বুনিনি। তাই ভুলভাল হয়ে যাচ্ছে। তবুও সময় তো কাটছে!’’ জিরাপাড়ার আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার মহিলারা অনেকেই কাঁথা, আসন করছেন। এলাকার বাসিন্দা চুনি সরেন, ফুলমণি সরেনরা বলেন, ‘‘এখন জঙ্গল থেকে পাতা আনতে দিচ্ছে না। তাই কাঁথা, আসন করছি।’’
গোয়ালতোড়ের বাসিন্দা লোকসংস্কৃতির গবেষক শঙ্কর মহাপাত্র ও গড়বেতার বাসিন্দা জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি দু'জনেই বলেন, ‘‘লকডাউনের ফলে বাড়ির মহিলাদের ব্যস্ততা কমেছে। তাঁদের হাত ধরেই ফিরছে হারিয়ে যাওয়া কাঁথাশিল্প, আসন শিল্প। এটা ভাল দিক। সময়ও কাটছে, প্রয়োজনও মিটছে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)