ছবি এএফপি।
রাত পোহালে চলতি আর্থিক বছরের শেষ দিন। তার আগেই যাঁরা সমুদ্রে মাছ ধরতে যান, তাঁদের ট্রলার, ভটভুটি কিংবা হস্তচালিত নৌকোর লাইসেন্স নবীকরণ করতে হবে। অথচ রাজ্য সরকারের এই নিয়ম মানতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কয়েক হাজার মৎস্যজীবী।
করোনা সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের লকডাউন নির্দেশিকা মেনে ঘরের বাইরের বেরোচ্ছে না মৎস্যজীবীরা। এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবে ট্রলার কিংবা হস্তচালিত নৌকো চালানোর লাইসেন্স নবীকরণ করা হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাঁথি-সহ গোটা জেলার উপকূল এলাকার মৎস্যজীবীরা।
রাজ্যের মৎস্য উন্নয়ন নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর ৩১ মার্চের আগে হস্তচালিত নৌকা, ভুটভুটি এবং ট্রলারের লাইসেন্স নবীকরণ করাতে হয়। এর জন্য রাজ্য সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে মৎস্য দফতর থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ এবং জমা দিতে হয়। পরে জমা দেওয়া কাগজপত্র যাচাই করে জুন মাসে সমুদ্রে মাছ ধরার মরসুম শুরু হওয়ার আগে মৎস্যজীবীদের হাতে লাইসেন্স তুলে দেয় সংশ্লিষ্ট দফতর। দিঘা-সহ গোটা উপকূল এলাকায় পাঁচ হাজারের বেশি এরকম লাইসেন্সপ্রাপ্ত মৎস্যজীবী রয়েছেন। আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে বলে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ১৪ জুন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ু-সহ পূর্ব উপকূলের রাজ্যগুলিতে সমুদ্রে মাছ ধরার ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে বলে জানা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে মার্চের প্রথম থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এদেশে শুরু হওয়ায় ধাক্কা খায় মাছ শিকারে ব্যবহৃত ট্রলার এবং হস্তচালিত নৌকার লাইসেন্স নবীকরণের প্রক্রিয়া।
ট্রলার মালিক নিশিকান্ত মণ্ডলের দাবি, সরকারি নির্দেশিকা মেনে রাস্তায় বেরোনো সম্ভব নয়। তাই এখনও ট্রলারের লাইসেন্স নবীকরণের আবেদনপত্র তোলা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আগামী বছর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে।’’ লাইসেন্স নবীকরণ না হলে জুন মাস থেকে সমুদ্রে মাছ ধরা কোনওভাবে যে সম্ভব হবে না তা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন হস্তচালিত নৌকার মালিকেরাও। যদিও মৎস্যজীবীদের এই সমস্যা বিবেচনা করে লাইসেন্স নবীকরণের জন্য সময়সীমা বাড়ানোর দাবিতে সরব হয়েছে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি।
দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরাম নেতা তথা কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী ইউনিয়নের সভাপতি তমালতরু দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘দেশের সুরক্ষার জন্য মৎস্যজীবীরা লকডাউনের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। কিন্তু ট্রলার এবং হস্তচালিত নৌকার লাইসেন্স নবীকরণের যে সময়সীমা রাজ্য সরকার বেঁধে দিয়েছে, তাতে ট্রলার এবং নৌকার মালিকেরা সমস্যায় পড়বেন। তাই লাইসেন্স নবীকরণের জন্য যাতে অন্তত দু’মাস বেশি সময় দেওয়া হয় তার জন্য রাজ্যের মৎস্য অধিকর্তা-সহ বিভাগীয় আধিকারিকদের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।’’
মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে লাইসেন্স নবীকরণের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন জানানো সত্ত্বেও রাজ্য সরকার কিংবা মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে এখনও নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যের মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিৎ বাগকে এ বিষয়ে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে ট্রলার মালিক এবং হস্তচালিত নৌকো মালিকদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ আনন্দময় অধিকারী, তিনি জানান, সমস্ত দিক বিবেচনা করে মৎস্যযান নবীকরণের সময়সীমারাজ্য সরকার নিশ্চয়ই বাড়াবে বলেই তাঁরা আশাবাদী। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলা হবে।