টেপরপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই বোর্ড মুছে লেখা হয়েছে বলে দাবি। নিজস্ব চিত্র।
প্রকল্পের নাম পরিবর্তন নিয়ে সংঘাতে জড়িয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করলে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ মিলবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্র। এই অবস্থায় রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে আসার আগে তড়িঘড়ি বাংলা গ্রামীণ সড়ক যোজনার নাম বদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ‘বাংলা গ্রামীণ সড়ক যোজনা’ মুছে সেখানে ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’ লেখা হচ্ছে মহকুমা জুড়ে।
কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দে ২০০০ সালে ডিসেম্বর মাসে প্রতিটি রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় পাকা রাস্তার তৈরির প্রকল্প উদ্বোধন হয়। পঞ্চায়েত এলাকায় অপেক্ষাকৃত ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামীণ রাস্তাকে পাকা রাস্তা করে সেখানকার অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করাই ছিল মূল উদেশ্য। প্রকল্পের জন্য দরপত্র করে ঠিকাদার নিয়োগ করে সরাসরি কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে জেলা প্রশাসনের। গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় কেন্দ্র সরকার ৪০ শতাংশ বরাদ্দ কমিয়েছে। কেন্দ্রকে ৬০ শতাংশ এবং রাজ্যকে ৪০ শতাংশ অর্থ খরচ করতে হয়। এ জন্য প্রকল্পে কেন্দ্রের নাম নিয়ে আপত্তি জানায় রাজ্য। রাজ্য প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার নামের পরিবর্তে বাংলা গ্রামীণ সড়ক যোজনা নাম দেয়। কিন্তু প্রকল্পের নাম পরিবর্তনে আপত্তি জানায় কেন্দ্র। এরপরেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করায় কেন্দ্র তাদের বরাদ্দ অর্থ আটকে দিয়েছে বলে দাবি করে তৃণমূল।
ইতিমধ্যেই সরেজমিন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা রাজ্যে এসে প্রকল্প পরিদর্শনের কাজ শুরু করেছে। সেই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও প্রকল্পের নাম বদলাতে নিষেধ করা হয়েছে। সূত্রের খবর, চাপে পড়ে বাংলা গ্রামীণ সড়ক যোজনা লেখায় সাদা কালির প্রলেপ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে। তার পরিবর্তে সেখানে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা লেখা হচ্ছে। গত বছর পটাশপুরে কেলেঘাইনদীর বাঁধ ভেঙে গ্রামীণ সড়ক যোজনায় তৈরি একাধিক রাস্তার ক্ষতি হয়। নতুন করে সেই রাস্তা মেরামতি শুরু হয়েছে। কোথাও সেই কাজ শেষ হয়েছে। এগরা মহকুমায় পাঁচটি ব্লক ও একটি পুরসভা মিলিয়ে মোট সাতচল্লিশটির মতো প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা রাস্তা রয়েছে। মংলামাড়ো থেকে তালছিটকিনি ও টেপরপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সেলমাবাদ পর্যন্ত দুটি রাস্তা মেরামতির কাজ শেষে ডিসপ্লে বোর্ডে বাংলা গ্রামীন সড়ক যোজনায় রাস্তা উল্লেখ করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আসার আগেই রবিবার সেই বোর্ডে বাংলা গ্রামীণ সড়ক লেখা মুছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা লেখা হয়েছে। গোটা জেলা জুড়েই এই কাজ হচ্ছে বলে বিরোধীদের দাবি। বিজেপির কটাক্ষ, কেন্দ্র সরকার নজরদারি চালাতেই রাজ্যের শাসক দল ঠেলায় পড়ে নাম পরিবর্তন করছে।
কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি তরুণ মাইতি বলেন, ‘‘জেলা পরিষদ ও পূর্ত দফতর নিদির্ষ্ট নিয়ম মেনে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা নাম লিখছে। অনেক জায়গায় নাম লেখা ছিল না। হয়তো সেগুলিই লেখা হচ্ছে।’’ কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপির জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিতের দাবি, ‘‘কেন্দ্রের টাকা নিয়ে রাজ্য সরকার নিজেদের ঢোল পিটিয়ে ছিল। এখন ঠেলায় পড়ে বাংলা গ্রামীণ সড়ক যোজনা মুছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা লিখতে হচ্ছে।’’
এগরার মহকুমাশাসক সম্রাট মণ্ডল বলেন, ‘‘নতুন করে প্রকল্পের নাম লেখার বিষয়টি নজরে নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’