বৈঠকে দলীয় নেতাদের সঙ্গে সুব্রত বক্সী। নিজস্ব চিত্র
মঞ্চে উপস্থিত দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। সেই মঞ্চেই তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বের বার্তা, কোনও ‘দাদা’ নয়, তাঁরা এবং দলের এ জেলার সব কর্মী- সমর্থকেরা ‘দিদি’-র সঙ্গেই আছেন, থাকবেনও।
শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল ত্যাগ নিয়ে জল্পনার মধ্যেই সাংসদ মানস ভুঁইয়ার বার্তা, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাকে রক্ষা করছেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে বলব, মমতা, তুমি এগিয়ে চলো, মেদিনীপুর জেলা তোমার সঙ্গে আছে।’’ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে, তাঁর নির্দেশিত পথেই আমরা লড়াই করব।’’ দলের জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়ের ঘোষণা, ‘‘জন্মেছি তৃণমূলে। শেষ জীবন পর্যন্ত মমতাদির সঙ্গে থাকব।’’
শনিবার মেদিনীপুরে দলের জেলার বর্ধিত সভায় হাজির হন সুব্রত বক্সী। বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেন সাংগঠনিক পরিস্থিতি। ৭ ডিসেম্বর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুরে সভা করবেন— সুব্রতর এই ঘোষণার পরই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন দলের কর্মীরা। পশ্চিম মেদিনীপুরে শুভেন্দু অনুগামী নেতার সংখ্যা কম নয়। দলীয় সূত্রে খবর, এদিনের সভায় ডাকাই হয়নি সক্রিয় অনুগামীদের। ডাক পাননি অমূল্য মাইতি, রমাপ্রসাদ গিরি, প্রণব বসু, স্নেহাশিস ভৌমিকরা। কৌশলে অনুগামীদের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা করেছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। অনুগামীদের মধ্যে তুলনায় যাঁরা কম সক্রিয়, তাঁদের সভায় ডাকা হয়েছে। সভায় দেখা গিয়েছে প্রদীপ পাত্র, মামনি মান্ডিদের। প্রদীপরাও শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাঁদের সঙ্গে এ দিন কথাও বলেছেন সুব্রত। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘দলের সকলকেই ডাকার কথা বলেছিলাম। যাঁরা ডাকাডাকি করেন, তাঁদের থেকে খোঁজ নিয়ে দেখব ঠিক কী হয়েছে!’’
তাঁর মিনিট কুড়ির বক্তৃতায় একবারের জন্যও শুভেন্দুর নাম নেননি সুব্রত বক্সী। সুব্রতকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এই নির্বাচন আমাদের কাছে খুব কঠিন নির্বাচন নয়, কিন্তু এই নির্বাচন আমাদের কাছে খুব তাৎপর্যপূর্ণ নির্বাচন।’’ কেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি। তাঁর কথায়, ‘‘এই নির্বাচনের দিকে শুধু বাংলার মানুষ তাকিয়ে নেই। ভারতবর্ষের মানুষ তাকিয়ে আছেন। কারণ, বাংলা থেকেই শুরু হবে সংবিধানকে বাঁচানোর লড়াই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এই লড়াইয়ের মাঝখানে অনেক বাধা-বিঘ্ন, অনেক ছোটখাটো ধন্দ, নিজেদের মধ্যে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন, মানুষের সামনে প্রতিবাদ করার সুযোগ একটাই। সঙ্ঘবদ্ধভাবে এগোতে হবে। কোথাও একটু মানসিক তফাত থাকতে পারে। লড়াই, সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কারও প্রশ্ন নেই। দল বেঁধে বেরোতে হবে।’’
মেদিনীপুরের সঙ্গে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহু আন্দোলনের স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে, তাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। তাঁর কথায়, ‘‘মেদিনীপুর জেলা চিরকালই লড়াইয়ের জেলা। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বহু লড়াইয়ের সাক্ষী এই জেলা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বহু আন্দোলন সংগঠিত করেছেন।’’ সভাঘরের ভিড় দেখে তাঁর ঘোষণা, ‘‘আমার যদি বিন্দুমাত্র রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে থাকে, তা থেকে বলতে পারি, আগামী নির্বাচনে জেলার ১৫টি আসনের মধ্যে আমরা ১৫টিতেই জয়লাভ করব।’’ অজিতরাও রাজ্য সভাপতিকে জানিয়েছেন, জেলার সব ক’টি আসনই নেত্রীকে উপহার দেবেন।